ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অটোরিকশাচালক সাহাবুদ্দিনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১১ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) ঢাকা মহানগর হাকিম ফারাহ দিবা ছন্দার আদালতে এ মামলার আবেদন করেন নিহতের বাবা আবুল কালাম। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে শেরেবাংলা নগর থানাকে নির্দেশ দেন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা পঞ্চম মামলা এটি। এর মধ্যে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) একটি হত্যা ও বুধবার (১৪ আগস্ট) দুটি ও বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দুটি মামলা করা হয়। এ পাঁচ মামলার মধ্যে চারটি হত্যা এবং অন্যটি গুম-অপহরণের অভিযোগে করা হয়েছে।
এ মামলার অন্য ৯ আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপির সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন-অর রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের এক দফা চলাকালে গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে নিহত হন সাহাবুদ্দিন। এদিন খাবার কিনতে তিনি বাসা থেকে বের হয়েছিলেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
হেলিকপ্টার থেকে গুলি: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শিশুহত্যা মামলা
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের দারুন্নাজাত ইসলামিয়া মাদরাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র জোবাইদ হোসেন ইমনকে (১২) র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) নিহত ইমনের মামা আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ ভুইয়া ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে এ মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মোহাম্মদপুর থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
ইমন হত্যা মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত আইজিপি ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ মহিউদ্দিন, ডিবির ডিএমপির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার এবং হেলিকপ্টার টহল টিমের অজ্ঞাতপরিচয় সদস্যরা।মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই আসামিদের নির্দেশে র্যাব সদস্যরা হেলিকপ্টার থেকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এসময় ভিকটিম জোবাইদ হোসেন ইমনের বাম কানের ওপর দিয়ে গুলি প্রবেশ করে ডান কানের নিচ দিয়ে চোয়াল ভেদ করে বেরিয়ে যায়। গুলির আঘাতে ঘটনাস্থলেই ভিকটিম জোবাইদ হোসেন ইমন মাটিতে পড়ে গেলে স্থানীয় লোকজন, মামলার বাদী ও অন্য সাক্ষীরা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র হত্যা মামলা
রাজধানীর কাফরুল থানাধীন ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজনকে (১৮) গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বুধবার (১৪ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আহম্মেদ হুমায়ুন কবিরের আদালতে এ মামলা করেন নিহত রাজনের ভাই রাজিব (৩২)। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে কাফরুল থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান নিখিল, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নান কচি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজি মেজবাউল হক সাচ্ছু, সাবেক সংসদ সদস্য কামাল আহম্মেদ মজুমদার, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মানুন, অতিরিক্ত আইজিপি ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, স্থানীয় আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ নেতা সালামত উল্লাহ সাগর, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সদস্য দীপংকর বাছার দীপ্ত। এছাড়াও মামলায় আওয়ামী লীগের আরও ৫০০ থেকে ৬০০ নেতাকর্মীকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।
বাদী অভিযোগ করেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হত্যার ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশে আসামির সরাসরি অংশগ্রহণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০ থেকে ৬০০ নেতাকর্মীর সশস্ত্র অংশগ্রহণ, উপস্থিতি ও হামলায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর ১৯ জুলাই হত্যার উদ্দেশে নির্বিচারে গুলি চালালে আমার ভাই ফয়জুল ইসলাম রাজন মিরপুর-১০ গোলচত্বর সংলগ্ন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে পাকা রাস্তায় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়। এদিন ফয়জুল ইসলাম রাজন ছাড়াও আরও অনেক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহত হন।
গুম-অপহরণের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা
রাজধানীর উত্তরা থেকে এক আইনজীবীকে অপহরণ করে গুম করার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে বুধবার (১৪ আগস্ট) মামলা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালতে মামলার আবেদন করেন ভুক্তভোগী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে উত্তরা-পশ্চিম থানাকে এজহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। এছাড়াও র্যাবের অজ্ঞাতপরিচয় ২৫ সদস্যকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।