রাজনৈতিক ও নিয়মিত বিভিন্ন মামলায় মাঝেমধ্যেই গ্রেফতার হচ্ছেন আসামীরা। এ কারণে চাঁদপুর জেলা কারাগারে সম্প্রতি বন্দির সংখ্যাও বেড়েছে। ৪৭৫ বন্দি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন হলেও কারাগারে রয়েছে দ্বিগুণ। যদিও কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অতিরিক্ত বন্দির চাপ সামলাতে তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে জামিনে মুক্তি পাওয়া আসামিদের অভিযোগ, কারাগারে বন্দিদের ঘুমানো, গোসলসহ বিভিন্ন কাজে অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। পুলিশ জানায়, চাঁদপুর জেলার প্রতিটি থানায় নাশকতা ও পুলিশের কাজে বাধাসহ রাজনৈতিক একাধিক মামলা হয়েছে। ওই মামলায় অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছেন। যারা সবাই চাঁদপুর কারাগারে বন্দি। মাদক মামলায় প্রতিদিনই দু-একজনকে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ ধরায় ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ৩৭১ জেলেকে কারাগারে পাঠানো হয়। যদিও তাদের অনেকেই এখন জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জেলার মুহাম্মদ মুনীর হোসাইন বলেন, বর্তমানে কারাগারে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি আছে। তারা সবাই কোনো না কোনো মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে এসেছে। সাধারণভাবে এক হাজার বন্দি এ কারাগারে থাকতে পারে। তবে বন্দি খুব বেশি হয়ে গেলে আমরা ওয়ার্ডের বারান্দাগুলো খুলে দিই। সেখানে তারা থাকতে পারে। বন্দিদের সঙ্গে স্বজনের সাক্ষাতের রুমটি আকারে ছোট। তাই বন্দির সংখ্যা বেশি হলে স্বজনরা সাক্ষাৎ করতে এলে কিছুটা চাপ পড়ে। আমরা চাইলেও রুমটি বড় করতে পারব না। আমাদের জনবলেরও ঘাটতি আছে। তার পরও চেষ্টা করছি বন্দিদের সেবা দেয়ার। আমাদের কাজ হলো, যারা এখানে আসবে তাদের দেখাশোনা করা। ভালো রাখা ও ভালো পথে আনার চেষ্টা করা।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, বন্দিদের জন্য পাঁচটি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে দুটি চারতলা, দুটি দোতলা এবং একটি একতলা। এসব ভবনে ২৮টি ওয়ার্ড রয়েছে। যার মধ্যে তিনটি নারী ওয়ার্ড। কারাগারের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী ৪৫৪ পুরুষ ও ২১ নারী বন্দি থাকার কথা। তবে আসামি ও কয়েদি মিলে বর্তমানে বন্দি আছেন ৯৭৬ জন। এর মধ্যে নারী বন্দি আছেন ৪৪ জন। আর পুরুষ রয়েছেন ৯৩২ জন।
জেলা কারাগারের সুপার মোহাম্মদ ফোরকান ওয়াহিদ বলেন, কারাগারে সবসময় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দি থাকে। এখানে বন্দিদের থাকার জন্য যে রুমগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো অনেক বড়। এজন্য তাদের থাকতে খুব একটা সমস্যা হয় না। এখন পর্যন্ত আমরা অতিরিক্ত বন্দি নিয়ে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। আনুপাতিক হারে তাদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। অর্থাৎ বন্দি যতজন থাকবেন, ততজনের ওপর নিয়মানুযায়ী যে যতটুকু খাবার পান, সে হিসাবেই খাবার দেয়া হয়। যে কয়জন বন্দি থাকবেন সে অনুযায়ী খাবার রান্না হয় এবং প্রত্যেকে সঠিক ও সমানভাবে খাবার পান। ফলে বন্দি বাড়লেও খাবারে কোনো সমস্যা নেই। তবে অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা আছে। বিশেষ করে গোসলখানা নিয়ে সমস্যা হয়। কারাগারে অতিরিক্ত বন্দি হলে আমাদের স্টাফদেরও কিছুটা চাপ নিতে হয়। তিনি বলেন, যেসব বন্দি পড়ালেখা জানেন না। তাদের নিরক্ষরতা দূর করার জন্য অক্ষর জ্ঞান দেয়া হয়। ইলিশ রক্ষা অভিযানে অনেক জেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযান শেষে তাদের অনেকেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।