প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের তাদের নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে দ্বারে দ্বারে গিয়ে জনগণকে নৌকায় ভোট চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ, একমাত্র আওয়ামী লীগই দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমরা (বুধবার) আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছি। ইশতেহারটি পড়ুন এবং ইশতেহার নিয়ে জনগণের কাছে যান এবং নৌকায় ভোট চান।”
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকাল ৩ টায় চাঁদপুর হাসান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ উপলক্ষে ৬টি কয়েকটি জেলায় অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল নির্বাচনী জনসভায় চাঁদপুর জেলায় অংশগ্রহণ করে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছে এবং একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এর যাত্রা ২০২৬ সালে শুরু হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গত ১৫ বছরে দেশের যে উন্নয়ন করেছি সেই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে এবং একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে ক্ষমতায় আসলে সেই অগ্রযাত্রাটা ধরে রাখতে। সেকারণে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য আপনারা জনগণের দ্বারে দ্বারে যাবেন। আপনারা ভোট চাইবেন। জনগণ ভোট দিয়ে যেন আমাদের সেবা করার সুযোগ দেন। আর একটি কথা এবার যেহেতু নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানারকম চক্রান্ত হচ্ছে তাই নির্বাচনের পরিবেশটা যাতে সুন্দর হয়, উৎসবমুখর হয়, প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
তিনি এ সময় বিএনপিকে রাজনৈতিক দল নয়, বরং সন্ত্রাসি সংগঠন বলে আখ্যায়িত করেন।
তিনি বলেন, বিএনপি হচ্ছে একটি সন্ত্রাসি দল আর একটি দল (জামায়াত) হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল। আর এরা নির্বাচনে না আসলে নির্বাচন অংগ্রহণমূলক হবে না, এটা আমরা বিশ^াস করি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের অংশগ্রহণ হবে জনগণের সমাবেশ হলে। ভোটারদের আগমনে তাদের অংশগ্রহণে এখানে নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। আমরা সেটাই চাই। আর সন্ত্রাসি দল তারা নির্বাচনে বিশ^াসও করে না মানুষ খুন ছাড়া আর দুনীতি করা ছাড়া ওদের দিয়ে দেশের কোন কল্যাণও আসবে না। ওরা মানুষকে কিছুই দিতে পারবে না।
তিনি বলেন, সেই করণেই আমরা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। হ্যাঁ, নৌকা মার্কা দিয়েছি পাশাপাশি আরও যারা দাঁড়াতে চায় তারাও দাঁড়াবে। এখানে একটি অনুরোধ থাকবে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আপনারা বজায় রাখবেন। যার যার ভোট সে সে চাইবেন। জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে। এটাতো আমাদেরই শ্লোগান। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’-এই শ্লোগান দিয়েই তো আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। এই শ্লোগান দিয়েই তো আমরা সংগ্রাম করেছি। সে কথাটা মনে রেখে যার যার ভোট সে সে চাইবেন। জনগণ যাকে ভোট দেবে সেটাই মেনে নেবেন। সেভাবেই এই নির্বাচন পরিচালিত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভোট চাওয়ার অধিকার যেমন প্রার্থীর আছে তেমনি ভোট দেওয়ার অধিকার জনগণের। এখানে কেউ কারো ওপর কোন বল প্রয়োগ করার চেষ্টা করবেন না। কোন সংঘাত সৃষ্টি করবেন না।
তিনি বলেন, এখন ডিজিটাল যুগ। সকলের হাতেই মোবাইল ফোন রয়েছে, সিসি ক্যামেরা রয়েছে, কাজেই যারাই গোলমাল করবেন, ছবি কিন্তু উঠে আসবে। আর নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হলে কেউ কিন্তু রেহাই পাবে না। এটা মাথায় রাখতে হবে। আর জনগণ ভোট দেবে তাদের সেই ভোট দেওয়ার সুন্দর পরিবেশ তেরি করে দিতে হবে। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে দিতে হবে এবং যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় সেই ব্যবস্থাটা সবাইকে নিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, “ইনশাআল্লাহ আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আবার জনগণের সেবা করার সুযোগ পাবে, জনগণের কাছে সেটাই আমাদের দাবি। সেটাই আমাদের আকাঙ্খা। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ তথা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ ইনশাআল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার অপরাহ্নে দলের তেজগাঁও কার্যালয় থেকে জামালপুর, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, চাঁদপুর ও বান্দরবানে আওয়ামী লীগের ছয়টি নির্বাচনী জনসভায় ভার্চুয়ালি ভাষণ প্রদান করেন ।
জনসভায় চাঁদপুরের ৫টি আসনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্য উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর ১ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, চাঁদপুর -২ সংসদীয় আসনের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, চাঁদপুর- ৩ সদর ও হাইমচর আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান, চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনে মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বীর বিক্রম।
জনসভার চাঁদপুর প্রান্তে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওচমান গনি পাটওয়ারী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু, পৌর মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, ফরিদগঞ্জ পৌর মেয়র যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটোয়ারী, অ্যাড. মজিবুর রহমান ভূইয়া, উপ দপ্তর সম্পাদক অ্যাড.রনজিত রায় চৌধুরী, মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কুদ্দুছ, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাড, জাহিদুল ইসলাম রোমান, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামীলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড জেসমিন সুলতানা, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারী, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি রাধা গোবিন্দ গোপ,
সাধারন সম্পাদক আমিনুর রহমান বাবুল, কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাড জাফর ইকবাল মুন্না, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুল, মোহাম্মদ আলী মাঝি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক অ্যাড. হেলাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ফেরদাউস মোর্শেদ জুয়েল, মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য গাজী মুক্তার হোসেন, সদর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক অ্যাড, হুমায়ুন কবির সুমন,
যুগ্ম-আহ্বায়ক শিমুল হাসান সামনু, তাজুল ইসলাম মিয়াজি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জহির উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার ওপর নির্মিত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। পরে চাঁদপুরের শিল্পীদের পরিবেশনায় নাচ ও গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা।