চাঁদপুর জেলা কারাগারে স্ত্রী হত্যা মামলার হাজতি স্বামী ব্রজলাল পাটিকরের (৬৫) মৃত্যু হয়। রোববার সকালে কারাগারে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে, পরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ব্রজলাল পাটিকর কচুয়া পৌরসভাধীন ৪নং ওর্য়াড কড়ইয়া পাটকর পাড়ার রাখাল চন্দ্র পাটিকরের ছেলে। ২০০১ সালের ৩১ অক্টোবর কচুয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ব্রজলালের দ্বিতীয় স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার প্রায় দুই বছর পর ২০০৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পুলিশ ব্রজলাল পাটিকরকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করে।
পরে ওই মামলাকে সাজানো দাবি করে ব্রজলালের ছেলে দিলীপ চন্দ্র বাদী হয়ে ২০১০ সালে আরেকটি মামলা করেন। দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে করা এই মামলায় আসামি হিসেবে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা এহসানুল হক ওরফে মিলনসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার এজেন্ট থাকার কারণে ব্রজলালের স্ত্রী ওই সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী ও পরিবার।
চাঁদপুর জেলা কারাগারের জেলার মো. মনির হোসাইন বলেন, গত ২৮ ডিসেম্বর কচুয়া থানায় স্ত্রী হত্যার মামলায় ব্রজলাল পাটিকরকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিয়ে আসা হয়। তিনি রবিবার সকালে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে কারাগারের স্বাস্থ্য সহকারি প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে তাৎক্ষণিক চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাঃ ওমর ফারুক বলেন, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে হাজতি ব্রজলাল পাটিকরের মৃত্যু হয়েছে। পরীক্ষা করে দেখেছেন, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতার কারণে তিনি হার্ট অ্যাটাক করেন।
ব্রজলালের আইনজীবী এ্যাড. মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ব্রজলালের স্ত্রী ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নৌকা প্রতীকের এজেন্ট হিসেবে কচুয়া থানার সুবিদপুর কমিউনিটি সেন্টার ভোটকেন্দ্রের মহিলা বুথের দায়িত্ব পালন করেন। ওই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এহসানুল হকসহ তাঁর সমর্থকদের নিয়ে জাল ভোট দিতে গেলে তিনি প্রতিবাদ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে ব্রজলালের স্ত্রীকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন। ওই ঘটনার জের ধরে নির্বাচনে জয়ের পর তাঁর বাড়িতে এহসানুল হকের নেতৃত্বে সমর্থকেরা হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও পরিবারের সদস্যদের মারধর করেন। ব্রজলালের স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান। দলবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করে পরদিন কচুয়া বাসস্ট্যান্ডে লাশ ফেলে রাখে।
হেলাল উদ্দিন অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় এহসানুল হকের চাপে পুলিশ তাৎক্ষণিক মামলা না করে দুই বছর পর নামমাত্র মামলা করে। যেখানে দুঃখজনক ভাবে ভুক্তভোগীর স্বামীকেই আসামি করা হয়। পরে ২০১০ সালে ব্রজলাল পাটিকরের ছেলে বাদী হয়ে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন। যাতে এহসানুল হকসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৮১০ জনকে আসামি করা হয়।
আইনজীবী হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রথম মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ব্রজলাল পাটিকরের বিরুদ্ধে একতরফা পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আইনের বিধান অনুযায়ী তাঁকে পরবর্তী মামলা থেকে বাদ দিতে পারেননি। ফলে গত ২৮ ডিসেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে ব্রজলালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
রবিবার সকালে বজলালের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে তার লাশ নিতে আসেন তাঁর প্রথম স্ত্রী ঝর্ণা রানী দে। লাশের সামনে তিনি কান্না ভেঙ্গে পড়ে চিৎকার করে বলেন, বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সন্ত্রাসীরা আমার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী রাখি রাণীকে হত্যা করে উল্টো তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়ার কারনে আজ আমার স্বামীর মৃত্যু ঘটেছে। আমার স্বামী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকলেও মিথ্যা মামলা থেকে আমার স্বামী রেহাই পেলোনা না। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,আওয়ামী লীগ করে কি লাভ হলো। মিথ্যা মামলার কলঙ্খ নিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
ব্রজলালের ভাগনে কৃষ্ণ পাটিকর বলেন, জোট সরকার আমলে তাঁর মামিকে ধর্ষন করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। মিথ্যা মামলা দিয়ে মামাকে আসামি করা হয়েছিল। যার দরুন অসুস্থ হয়ে তিনি আজ মারা যান। এর ঘটনার সঙ্গে প্রকৃত জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
চাঁদপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ আর এম জাহিদ হাসান বলেন, ব্রজলালের লাশের সুরতহালের সময় তেমন কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। তারপরও ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এ্যাড.হেলাল উদ্দিন ব্রজলাল পাটিকরকে নিয়ে তার ফেসবুক ওয়াল থেকে হৃদয় বিদারক পোস্ট করেন।
পোস্টটি তুলে ধরা হলো- “ব্রজ লাল পাটিকর আমাদের কে ক্ষমা কর”
—– নজির বিহিন ঘটনা স্ত্রী কে ধর্ষনের পর হত্যা করে সেই মামলায় স্বামীকে আসামি করা হয় ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কচুয়া উপজেলাধীন কড়ইয়া গ্রামের ব্রজলাল পাটিকরের স্ত্রী রাখী রানি শীল নৌকা মার্কার এজেন্ট থাকার অপরাধে বিএনপি জামাত শিবিরের কতিপয় নেতারা এহসানুল হক মিলনের নেতৃত্বে ও নির্দেশে তার বাড়িতে হামলা ভাংচুর লুটপাট করে বাড়ি থেকে রাখী রানি কে জোর পূর্বক তুলে নিয়ে গনধর্ষন করে খুন করে তার লাশ কচুয়া পুরাতন ঈগল বাস স্টেশনে বিগত ৩১/১০/২০০১ তারিখ ফেলে রাখে। পরবর্তীতে এহসানুল হক মিলনের চাপে পুলিশ রাখীর পরিবার কে মামলার বাদী হতে না দিয়ে দীর্ঘ দিন পরে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে তৎ সময়ের কচুয়া থানার এসআই শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে রাখী রানির স্বামী ব্রজলাল পাটিকর কে আসামি করে কচুয়া থানার মামলা নম্বর ০৯ তারিখ ০৩/৯/ ২০০৩ রুজু করে পরবর্তীতে ঘটনার প্রকৃত সত্যতা উদঘাটনের জন্য আমি এ্যাডভোকেট মো: হেলাল উদ্দিন মাননীয় জেলা ও দায়রা জজ আদালত চাঁদপুরে বিগত ১১/৩/২০১৯ তারিখ ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৫২৮ ধারার বিধান মোতাবেক পূন:তদন্তের আবেদন করি এবং তৎ কালীন কচুয়া থানার ওসি সন্তোষ বড়ুয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে পূন:তদন্তের আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্রজলাল পাটিকর ও রাখী রানির ছেলে দীলিপ চন্দ্র বাদী হয়ে কচুয়া থানার মামলা নম্বর ২৯ তারিখ ২৮/১২/২০১০ রুজু হয় যেখানে এহসানুল হক মিলন সহ ১৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলাগুলো অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত চাঁদপুরে বিচারাধীন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস প্রথম তদন্ত কারী অফিসার রাখী রানির স্বামী ব্রজলাল পাটিকরের বিরুদ্ধে একতফা পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করায় পরবর্তী তদন্তকারী কর্মকর্তা আইনের বিধান মোতাবেক তাকে পরবতী মামলা থেকে বাদ দিতে না পারায় গত কয়েক দিন পূর্বে কচুয়া থানা পুলিশ পূর্বের ওয়ারেন্ট মূলে ব্রজলাল পাটিকর কে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরন করলে আজ সকাল অনুমান ৭.৩০ মিনিটে জেল খানায় বন্দী অবস্থায় মৃত্যু বরন করেন। আমি গত ১৫ বছর রাখী রানির স্বামী ব্রজ লাল পাটিকরের পরিবার কে নিরবছিন্ন আইনগত সহায়তা দিয়েছিলাম তার সুখে দুঃখে পাশে ছিলাম আজ তিনি চলে গেলেন পরজগতে। ব্রজলাল পাটিকরের পরিবার কে আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে ধরনের সহায়তা করার দরকার ছিল সেই সহায়তা দিতে অনেক ক্ষেএেই ব্যর্থ হয়েছি ব্রজলাল পাটিকর কে সৃষ্টিকর্তা পরজগতে শান্তিতে রেখ ব্রজলাল পাটিকর আমাদের ক্ষমা কর।