ঢাকা কলাবাগান থানার মামলায় ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামি মতলব উত্তরের জহির ফকিরের ছেলে প্রতারক আল আমিনকে আটক করে মতলব উত্তর থানা পুলিশ।
গত মঙ্গলবার (২এপ্রিল) বদরপুরের লেংটার মেলা থেকে আটক করে আদালতে পাঠালে তাকে কারাগারে যেতে হয়।
প্রতারক আল আমিন বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের সকল জায়গায় মানুষের সাথে প্রতারণা করে থাকে।
মানুষকে চাকুরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আল আমিন।
গত বছর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থেকে শুরু করে ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট- সবই নিখুঁতভাবে জাল করে। এরপর ব্যাংকের চোখে ধুলো দিয়ে সেইসব কাগজপত্র ব্যবহার করেই নেয় কোটি কোটি টাকা ঋণ। পরে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করায় তাদের খোঁজে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তখন দেখা যায় ঋণগ্রহীতার পরিচয়-কাগজপত্র সবই ছিল জাল। এমনই একটি প্রতারক চক্রের মূল হোতা আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে মতলব উত্তর থানা পুলিশ।
পুলিশ বলছে, ঢাকা ব্যাংকসহ অন্তত ১১ টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আল আমিন। এক্ষেত্রে ভুয়া এনআইডি তৈরিতে সহায়তা করে খোদ নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মচারী। বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর জড়িত ৪৪ কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। এর সঙ্গে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশ আছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি জানান, প্রতারক প্রথমে ব্যাংকে গিয়ে ফ্ল্যাট কেনার ঋণের বিষয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে। কর্মকর্তারা পরিদর্শন করতে চাইলে তারা একটি ফ্ল্যাট দেখায়। এর আগেই তারা ওই ফ্ল্যাট বিক্রির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখে। কৌশলে ফ্ল্যাটের প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে তার এনআইডি কার্ড ও ফ্ল্যাটের কাগজপত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করে। ব্যাংক কর্মকর্তারা পরিদর্শনের সময় সব কিছু ঠিকঠাক দেখতে পান। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মচারীর মাধ্যমে ফ্ল্যাট মালিকের কাছ থেকে নেওয়া এনআইডির শুধু ছবি বদলে ফেলে প্রতারক। সেখানে চক্রের একজনের ছবি বসিয়ে দেওয়া হয়। ফলে ওই ভুয়া এনআইডি দিয়ে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট বা সার্ভারে সার্চ দিলে তা সঠিক দেখায়। এদিকে প্রতারক ১/২ মাসের জন্য একটি অফিস ভাড়া নেয়। ব্যাংক কর্মকর্তাদের ওই অফিস পরিদর্শনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্মকর্তারা সাজানো-গোছানো অফিস দেখতে পান। ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের দিন ব্যাংকের লোক উপস্থিত থাকেন। এনআইডি কার্ড, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট ঠিক আছে দেখে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের দু’-একদিন পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পে-অর্ডারের মাধ্যমে ঋণের টাকা দিয়ে দেয়। পরে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সার্ভারে অনুসন্ধান করে ওই এনআইডির কোনো তথ্য দেখতে পায় না।
প্রতারকরা ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা ব্যাংকেরই প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়েছে চক্রটির মুল হোতা আল আমিন।