চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের রামদাসদী গ্রামের বাসিন্দা রুমা বেগম নামের এক অসহায় নারীকে ফোন করে নিজেকে চাঁদপুর সদর মডেল থানার এসআই পরিচয় দিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চাইলো প্রফেসর পাড়া পীর বাদশা মিয়া রোডের বাসিন্দা হাছান আলী মুন্সির ছেলে মজিবুর রহমান মুন্সী ওরফে মজু মুন্সী ওরফে কানা মইজ্যা নামের এক প্রতারক। এ বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ ও অভিযোগকারী রুমা বেগমের সূত্রে জানা যায়, ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের রামদাসদী গ্রামের বাসিন্দা রুমা বেগমের ব্যবহৃত “রেডমি এ থ্রি” ফোনটি চুরি হয়। চুরির বিষয়টি নিয়ে পাশের বাড়ির একজনকে সন্দেহ হলে লতা (ছদ্মনাম) নামের একজন জিজ্ঞাসা করে। লতা ফোন নেয়নি বলে জানালে রুমা বেগম লতার মাকে জানায়। লতার মা লতাকে মারধর করলে এক পর্যায়ে মেয়েটি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে রুমা বেগমের ভাই শামছল গাজী মেয়েটিকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি করে। খবর পেয়ে সেখানে যায় প্রতারক ও ধান্দাবাজ মজু মুন্সি। সে লতার বাবাকে রুমা বেগমের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়ার জন্য কু-পরামর্শ দেয়। বিষয়টি রুমার ভাই শামছল গাজী অবগত হওয়ার তাদের পরিবার খুবই উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠার মধ্যে পরে। তারা এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পরে যে নিজ বাড়িতে না থেকে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এরপর মজু মুন্সী (কানা মইজ্যা) রুমা বেগমের ব্যবহৃত ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে নিজেই চাঁদপুর মডেল থানার এসআই সেজে ২৮ এপ্রিল রাত আনুমানিক ৮টায় মজু মুন্সীর ব্যবহৃত ০১৪০১২০০৮৯৫ নম্বর থেকে রুমা বেগমকে ফোন করে। রুমা বেগম পরিচয় শুনে ভয়ে তার পাশে থাকা নীলিমা চৌধুরী নামে একজনকে ফোন দিয়ে দেয় কথা বলার জন্য। নীলিমা বেগম মজু মুন্সীকে তার নাম জিজ্ঞাসা করলে সে খুবই উত্তেজিত হয়ে যায় এবং বলে, শামছল গাজী ও রুমা বেগমের বিরুদ্ধে থানায় বড় ধরণের ঝামেলা রয়েছে। ওইটা সমাধান করতে চাইলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। সমাধান করতে চাইলে ৫০ হাজার টাকা লাগবে। আর সমাধান না চাইলে দুইটারে ধরে থানায় আটক তো করবোই, উলঙ্গ করে পিটাবো। এ কথা শুনে রুমা বেগম ও নীলিমা চৌধুরী ভয়ে খুবই আতঙ্কিত হয়ে পরে এবং তারা জানায়, এত টাকা দেয়ার সামর্থ তাদের নেই। এ কথা শুনে মজিবুর রহমান মুন্সী ওরফে মজু মুন্সী (কানা মইজ্যা) আরো ক্ষিপ্ত হয়ে অনেক হুমকি, ধমকি ও খুব অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে ফোন রেখে দেয়। এরপর আমরা ফোন নাম্বারটি যাচাই করে জানা যায় প্রতারক মজু মুন্সী চাঁদপুর মডেল থানায় কর্মরত কেউ নন। পক্ষান্তরে সে একজন ধূর্ত, বাটপার ও ধান্দাবাজ প্রকৃতির লোক। সে এভাবেই বহু মানুষকে হয়রানি করে বহু অর্থ হাতিয়ে নেয়। পরের দিন গত ২৯ এপ্রিল লতার বাবার করা একটি অভিযোগের তদন্তে যান চাঁদপুর মডেল থানার একজন এএসআই। সেখানে হাজির প্রতারক ও ধান্দাবাজ মজু মুন্সী। সে রুমা বেগমের বসতঘরের সামনে গিয়েই অশ্লিল গালিগালাজ করে ঘরের ভিতরে থাকা লোকদের বেরিয়ে আসতে বলে। এরপর রুমা বেগমের বসতঘরের দরজা লাথি মারে, ঘরের টিনে প্রচন্ড জোড়ে জোড়ে লাথি মারে। ভিতর থেকে রুমার ভাই শামছল গাজী বের হয়ে আসলে তার কলার ধরে টেনে নেয়ার চেষ্টা করে। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় রক্ষা পায় শামছল গাজী।
প্রফেসর পাড়া পীর বাদশা মিয়া রোডের বসবাসকারী কে এই মজু মুন্সী? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে তার বসবাসরত এলাকায় যোগাযোগ করলে, এলাকার মানুষ জানায়, মজু মুন্সী (কানা মইজ্যা) হচ্ছে একজন ভয়ঙ্কর প্রতারক ও ধান্দাবাজ প্রকৃতির লোক। কোন কাজ-কর্ম ছাড়াই দিব্যি জীবন যাপন করছেন। মানুষকে বিভিন্ন বিপদে ফেলে মডেল থানার দু’ একজন কর্মকর্তাকে ভুল তথ্য দিয়ে তাদের অপব্যবহার করে অসহায় মানুষদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একজন কমিউনিটি পুলিশ সদস্য জানায়, বহু পূর্বে একজন ওসি ছিলেন চাঁদপুর সদরে। ওই ওসির সাথে সখ্যতা ছিলো মজু মুন্সির। সে সুযোগ নিয়ে এই এলাকার বহু মানুষ মজু মুন্সীর ভয়ে এলাকায় থাকতো না রাতে। মানুষকে এত পরিমাণ হয়রানি করতো মানুষ বাঁচার জন্য এলাকা ছেড়ে পালাত আর নয়তো টাকা তার চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিয়ে দিতো। তার নামে থানায় বহু পুরানো অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ তদন্ত করলে সব বের হবে। সে অনেক সময় পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে।
বিষয়টি নিয়ে চাঁদপুরের বর্তমান চৌকষ ও মেধাবী পুলিশ সুপার ও চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী ও জনসাধারণ