বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ গণতন্ত্রের আদর্শে সৃষ্টি হয়েছিল। আর গণতন্ত্র রক্ষার মূল কবজ হচ্ছে মুক্ত গণমাধ্যম। আজকে সেই গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে নতুন করে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীন প্রতিষ্ঠা করব। এটাই হোক বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আমাদের শপথ।
রোববার (৫ মে) প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজে আয়োজিত বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।মঈন খান বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও কথা বলার অধিকার নিয়ে মানুষের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার সব দায়দায়িত্ব সরকারের। কারণ সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় সাধারণ মানুষ বাধা দেয় না, মানুষের কথা বলায় আরেকজন বাধা দেয় না, বাধা দেয় সরকার।’
তিনি বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু বিশ্বে এমনও আলোচনা হয়েছে গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ নয়, প্রথম স্তম্ভ। মিডিয়া একটি রাষ্ট্রের শক্তির চেয়েও বেশি শক্তিশালী। কারণ সরকার যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন মিডিয়া অন্যায়কে প্রকাশ করে দিয়ে একটি রাষ্ট্রকে ভাঙতে পারে, নতুনভাবে গড়তেও পারে। এই সত্য আজকের সরকার যত উপলব্ধি করবে তত তাদের জন্য ভালো হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘জাতীয় প্রেস ক্লাবের অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনিই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠাতা করেছিলেন। আজকে আওয়ামী লীগ তাকে সৈনিক বলেন সম্বোধন করে। একজন সৈনিক যদি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে আওয়ামী লীগ কেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বাধা দেয়?’
মঈন খান বলেন, ‘বর্তমান সরকার নিজেদের স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি বলে দাবি করে, সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল গণতন্ত্র। দেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে, একদলীয় শাসন কায়েম হয়ে থাকে, মুক্ত চিন্তা বিকাশের সুযোগ না থাকে, ১৮ কোটি মানুষকে যদি আওয়ামী লীগের চিন্তা-ভাবনা অনুযায়ী একই লাইনে চলতে বাধ্য করা হয়, সেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকে না।’
বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে মহাসচিব ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, ডিইউজের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, বিএফইউজ যুগ্ম মহাসচিব বাছির জামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদ খান, ডিইউজের দপ্তর সম্পাদক ইকবাল মজুমদার তৌহিদ প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্য রহুল আমিন গাজী বলেন, ‘গত ১৫ বছরে ৬০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, সাগর রুনির হত্যার বিচার আজও হয়নি। পাঁচ শতাধিক পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমপি, মন্ত্রী বা সরকার দলীয় লোকজনের দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ করলেই সাংবাদিকের ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। অনেকে পরিবার নিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।’
তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে আজকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সর্বপ্রথম নিশ্চিত করতে হবে।
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে ভয়াবহ ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে আজকে সাংবাদিকদের কাজ করতে হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। সরকার হাতিয়ার হিসেবে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করছে। অনিয়ম দুর্নীতি প্রকাশ করলে তাদের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এটাই কি গণমাধ্যম স্বাধীনতা? ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ না গড়তে পারলে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা থাকে না?’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনের বাজার ১২০০ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু এই বিজ্ঞাপন এখন চলে যাচ্ছে ভারতীয় টিভি চ্যানেল ও ইউটিউব চ্যানেলে। আগে মানুষ সকালে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে পত্রিকা পড়ত, আর এখন সত্য খবর না থাকায় তারা বিমুখ হয়ে পড়েছে।