এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হতে পারে আগামী ১৭ জুন। সেই হিসাবে এখনও ঈদের বাকি এক মাসের বেশি। ঈদুল আজহায় বাংলাদেশে ১ কোটির বেশি পশু কোরবানি করা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন খামারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির জন্য পশু পছন্দ করে অগ্রিম বুকিং দিয়ে রাখছেন অনেক ক্রেতা। কোনো কোনো খামারি দাবি করেছেন, তাদের প্রায় অর্ধেক গরু ইতোমধ্যে বিক্রি বা বুকিং হয়ে গেছে।
প্রতি বছর কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পশু বিক্রির জন্য রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় হাট বসে। তবে, অনেক ক্রেতা খামার থেকেই কোরবানিযোগ্য পশু কিনতে পছন্দ করেন। আগেভাগে খামারে গিয়ে কোরবানির পশু পছন্দ করে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে বুকিং দিয়ে রাখেন তারা। তাই কোরবানির ঈদকে ঘিরে কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নেন খামারিরা।
সোমবার (১৩ মে) রাজধানীর বনশ্রী ও ডেমরা এলাকার আমুলিয়া মডেল টাউনে গফুর অ্যাগ্রো, বিসমিল্লাহ অ্যাগ্রো ও কাছের আরেকটি খামার ঘুরে কোরবানির পশু বিশেষ করে গরু প্রস্তুত ও বিক্রির খোঁজ-খবর নেয় ঢাকা পোস্ট। দেখা গেছে, প্রতিটি খামারে বিভিন্ন জাতের কোরবানিযোগ্য গরু রয়েছে। শেষ সময়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন খামারিরা। গরুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারের কর্মীরা। বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা আসছেন গরু দেখতে।
গফুর অ্যাগ্রোর দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মো. সম্রাট মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের খামারে শতাধিক ষাঁড় ছিল। এরই মধ্যে প্রায় অর্ধেক গরু বিক্রি হয়ে গেছে। খামারে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা দামের গরু আছে। আর সর্বনিম্ন আছে আড়াই লাখ টাকার গরু।
তিনি বলেন, আশা করছি এবারের ঈদে বিক্রি ভালো হবে। ইতোমধ্যে বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে। অলরেডি আমাদের অর্ধেক গুরু বিক্রি বা বুকিং হয়ে গেছে। বাকিগুলোও আশা করছি ঈদের আগে শেষ হয়ে যাবে। প্রতি ঈদে কয়েক কোটি টাকার বেচাকেনা হয়, এবারও আশা করছি তেমন কিছুই হবে।
খামারিরা বলছেন, কোরবানির পশুর দাম এবার বেশি হবে। কারণ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বাড়ায় তাদের লাভের পরিমাণ কমবে। তবে, কেউ লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করবে না। ক্রেতারা এখন কিনলে কিছুটা কমে কিনতে পারবেন। কোরবানির হাটে তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না পেলে পশু বিক্রি করবেন না। সেক্ষেত্রে ক্রেতাদের বাড়তি দামেই কিনতে হবে।
দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খামারি মো. আজমির হোসেন বলেন, এবার ঈদে দামটা মনে হয় একটু বেশিই থাকবে। গত ঈদে যে গরু চার লাখে বিক্রি হয়েছে, এটা কিনতে এবার ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি লাগবে। তবে, শেষ সময়ে দামটা আবার কমেও যেতে পারে। যদি শেষ সময়ে ভারত থেকে গরু আসা শুরু করে, তাহলে হয়তো দাম অস্বাভাবিক কমে যাবে। সেরকম কিছু হলে দেশি ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়ে যেতে পারেন।
তিনি বলেন, গরুর খাবারের দাম এক বছর আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। এই খামারে আমাদের গরু আছে ৫৪টা। সেগুলোর জন্য চার দিনের খাবার আমরা মিক্সড করেছি, যার খরচ প্রায় এক লাখ টাকা। কাঁচা ঘাস, ধানের কুড়া, দুই জাতের ভুসি, ছোলা ও মশুরিসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের মিশ্রণ থাকে এখানে।
বিসমিল্লাহ অ্যাগ্রো খামারের স্বত্বাধিকারী রাশেদ আহমেদ বলেন, কোরবানির ঈদের জন্য আমার খামারে ৮০টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে থেকে ক্রেতারা আসতে শুরু করেছেন। পছন্দ হলে ওজন স্কেলে উঠিয়ে মেপে দেখে খামারেই গরু রেখে যাচ্ছেন। ঈদের আগ মুহূর্তে তারা গরু নিয়ে যাবেন।
দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে প্রায় সব ধরনের পশু খাদ্যের দাম বেড়েছে। তাই এ বছর প্রতি গরুতে ২০ শতাংশ হারে দাম বৃদ্ধি পাবে।
গত কয়েক দশক ধরে কোরবানিতে বিশেষ করে ভারতীয় গরুর প্রাধান্য ছিল। তখন কোরবানি উপলক্ষ্যে গড়ে ২৪-২৫ লাখ গবাদি পশু দেশের বাইরে থেকে আসত। ধীরে ধীরে সেই চিত্র পাল্টেছে। সবশেষ কয়েক বছর দেশি পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। বাইরে থেকে গরু আনতে হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে খামারি রাশেদ আহমেদ বলেন, সরকার তো জানিয়েছে ভারতীয় গরু আসবে না। তারপরও প্রতিবছর সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে অসংখ্য গরু চলে আসে। এভাবে যদি এবারও ঢোকে, তাহলে দেশীয় ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় পড়ে যাবেন। এক্ষেত্রে সরকারকে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কোরবানির জন্য এক কোটি ৩০ লাখের বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। আর দেশে চাহিদা রয়েছে এক কোটি ১০ লাখের মতো। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় ২০ লাখ পশু বেশি আছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রাণিসম্পদ-২ অনুবিভাগ) এ.টি.এম. মোস্তফা কামাল গতকাল রোববার ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোরবানি উপলক্ষ্যে সীমান্ত দিয়ে পশুর অনুপ্রবেশ যেন না ঘটে, সেজন্য কঠোর নজরদারি থাকবে। কেউ যদি চোখ ফাঁকি দিয়ে পশু আনতে চায়, তবে বিজিবি ব্যবস্থা নেবে।
প্রসঙ্গত, গত বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারা দেশে মোট এক কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি গবাদিপশু কোরবানি করা হয়।