চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার (৮ জুলাই) চীন যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে চীনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে শেখ হাসিনার এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে রোববার (৭ জুলাই) একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চীনের রাষ্ট্রয়াত্ত্ব সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস। তারা জানিয়েছে, শেখ হাসিনার সফর চলাকালেই আরও দুটি দেশের সরকারপ্রধান চীন সফর করবেন। তারা হলেন- প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ভানুয়াতুর প্রধানমন্ত্রী শার্লট সালওয়াই এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জের প্রধানমন্ত্রী জেরেমিয়া মানেলে।একসঙ্গে একাধিক বিদেশি সরকারপ্রধানের চীন সফরকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে গ্লোবাল টাইমস। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন এবং গ্লোবাল সাউথের মধ্যে পারষ্পরিক সহযোগিতা থেকে উদ্ভূত ফলপ্রসূ সাফল্যের প্রমাণ হলো এসব সফর। এটিকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশ-বিদেশের পর্যবেক্ষকরা।চায়না ফরেন অ্যাফেয়ার্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লি হাইডংয়ের মতে, তিন দেশের নেতাদের চীন সফর পশ্চিমের ‘অপ্রচলিত স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতার’ বিপরীতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া এবং সমর্থনের বাস্তবতা প্রদর্শন করবে।
সিংহুয়া ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ইনস্টিটিউটের গবেষণা বিভাগের পরিচালক কিয়ান ফেং বলেছেন, উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে ‘ধোঁকা বা বাধা’ দেওয়ার লক্ষ্যে পশ্চিমারা যেসব ‘হয়রানিমূলক কৌশল’ অবলম্বন করে থাকে, সেগুলোর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করবে এসব কূটনৈতিক ব্যস্ততা।
ঐতিহাসিক মুহূর্ত
শেখ হাসিনার চীন সফরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বেল্ট অ্যান্ড রোড রিসার্চ সেন্টারে সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মোহাম্মদ সাইয়েদুল ইসলাম। তার মতে, এই সফর দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন পথ তৈরি করবে এবং পারস্পরিক সুবিধার বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত করতে পারে।তিনি গ্লোবাল টাইমসকে বলেছেন, চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং বিদেশি বিনিয়োগের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা কোনো রাজনৈতিক সূত্রে যুক্ত বা বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দাবি করে না।প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণ খাতে নতুন সহযোগিতা ব্যবস্থা দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে নতুন সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ, বন্দর সম্প্রসারণ এবং জ্বালানি সরবরাহ ক্ষমতার উন্নতি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
সাইয়েদুল ইসলাম বলেন, এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হবে।
সতর্ক নজর ভারতের
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে প্রতিবেশী ভারত। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর টানা তৃতীয় মেয়াদের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গত জুন মাসে ভারত গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এর কয়েকদিন পরে আবারও রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লি যান তিনি। পরপর দু’বার ভারত সফরের পর শেখ হাসিনা এবার চীনে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।কিয়ানের মতে, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে চীন ও ভারতের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ নীতির প্রয়োজন।