মতলব উত্তর থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মো. সানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে এলাকার ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষের সঙ্গে অসদাচরণ, অর্থের বিনিময়ে নিরপরাধ ব্যক্তিদের নামে চার্জশিট দেওয়ার অভিযোগ সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তার এসব অনিয়মের অভিযোগ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনও প্রতিকার মেলেনি। এতে ক্রমেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এলাকাবাসী।
জানা যায়, মো. ছানোয়ার হোসেন গত ২০২২ সালের অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখে মতলব উত্তর থানায় পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত হিসেবে যোগাদান করেন। এরপর থেকে অদ্যবধি তিনি মতলব উত্তর থানায় তদন্তের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দায়িত্ব থাকাকালীন অবস্থায় ৫ জন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বদলী এবং প্রত্যাহার হয়েছেন। এই সুযোগে তিনি মতলব উত্তর থানায় ৩ বার কয়েকমাস করে ভারপ্রাপ্ত ওসির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মতলব উত্তর থানায় ভারপ্রাপ্ত ওসি থাকাকালীন অবস্থায় ছেংগারচর পৌর নির্বাচন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সর্বশেষ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনেও তিনি এই থানায় ভারপ্রাপ্ত ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। নির্বাচনকালীন সময়েও বিভিন্ন প্রার্থীরা ওসি তদন্ত ছানোয়ারের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ করেছিলেন।
গতবারের ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখে নিজের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জাতীয় দৈনিক সংবাদ সারাবেলার সম্পাদককে বেআইনিভাবে আসামি করেছিলেন মতলব উত্তর থানার ওসি (তদন্ত) মো. ছানোয়ার হোসেন। ঘটনার দিন সংবাদ সারাবেলার সম্পাদক কাজী আবু জাফর মতলব উত্তরে ছিলনা বলে জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে ঐ সময়ে একাধিক গণমাধ্যমে ওসি (তদন্ত) মো. ছানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হলেও কোন অদৃশ্য কারণে তিনি মতলব উত্তর থানায় বহাল আছে, কারো জানা নেই।
গজরা ইউনিয়নের বাসিন্দা ও রাজনীতিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, এই বছরের গত ২৩ জুন আমাদের গ্রামে জায়গা সম্পত্তি নিয়ে একটি মারামারি ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় খোদেজা বেগম নামে এক মহিলা বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত ছানোয়ার হোসেনের নির্দেশে মীমাংসার কথা বলে আমাকে থানায় আসতে বললে, আমি তার কথামতো থানায় আসলে, আমাকে ধরে নিয়ে ঐ মামলা রেকর্ড করে আমাকে চাঁদপুর বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন। আমি জেল খেটে জামিনে বের হয়ে এসে ওসি তদন্তকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আমাকে কেন মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতের প্রেরণ করেছিলেন। আমার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন আপনি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন, তাই উপরের অর্ডার ছিল তাই আপনাকে জেলে পাঠিয়েছিলাম। পরবর্তীতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আগে আমার সাথে মতলব উত্তর থানার এসআই মিজানুর রহমান (৩) যোগাযোগ করেন। তিনি আমাকে বলেন আপনি ওসি তদন্তর সাথে যোগাযোগ করলে আপনার নাম চার্জশিট থেকে বাদ পড়বে। আমি পরে ওসি তদন্তের সাথে পুনরায় যোগাযোগ করি, তখন ওসি তদন্ত ছানোয়ার বলেন আপনি যদি আমাকে ৫০ হাজার টাকা দেন তাহলে আপনার নাম চার্জশিট থেকে বাদ যাবে। আমি টাকা দিতে অপরাগত স্বীকার করলে চার্জশিটে আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করে মামলা আদালতে পাঠিয়ে দেন। এখন আমি এই মিথ্যা মামলা থেকে পরিত্রাণ চাই এবং ওসি তদন্ত ছানোয়ার এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
সাদুল্ল্যাপুর ইউনিয়নের মুক্তিরকান্দি ভান্ডারী বাজার এলাকার গৃহবধূর শারমিন আক্তার জানান, আমার শশুর বাড়ির জায়গা সম্পত্তির বিষয় নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ করেন, আমার স্বামী বিদেশে থাকেন। ওসি তদন্ত ছানোয়ার হোসেন আমাকে বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার কাছ থেকে মোট ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছিল। বিনিময়ে আমার কোন কাজ করে দেয়নি।
ষাটনল ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের আরেক গৃহবধূ মর্জিনা বেগম জানান, আমার মেয়ের বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়ে মেয়ের বরের বিরুদ্ধে থানা একটি অভিযোগ করেছিলাম। তখন ওই অভিযোগটির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন ওসি তদন্ত ছানোয়ার হোসেন। আমরা তার কাছে আসলে তিনি জানান, মামলা মোকদ্দমা করলে আপনাদের অনেক টাকা-পয়সা খরচ যাবে। আমি বিষয়টি থানায় আপনাদের মীমাংসা করে দেব। তিনি বিষয়টি মীমাংসা করতে পারেননি। পরবর্তীতে তিনি আমাদের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে মামলাটি রেকর্ড করেছিলেন।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত ছানোয়ার হোসেন জানান, আমি যতদিন যাবত এই থানায় চাকরি করছি, সততা এবং আদর্শ নিয়ে চাকরি করছি। আমি কোন প্রকার অনিয়মের সাথে জড়াইনি।
চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব (পিপিএম) জানান, আমি কিছুদিন আগে জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেছি। এ বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। এখানে কোন পুলিশ অনিয়মের সাথে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।