মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মতলব উত্তরে বসেছে ১৮টি পশুর হাট। ছেংগারচর ও লুধুয়া আমতলা স্থায়ী হাট হলেও ১৬টি হাট অস্থায়ী।
এর বাইরেও বিভিন্ন এলাকায় পশুর হাট বসানো হয়েছে। পশুর জন্য হাটগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্রির জন্য কোরবানির পশু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা।
মতলব উত্তরের কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে কোরবানির হাটে ভারতীয় গরু নেই বললেই চলে। সবগুলো গরুই দেশি। গ্রামের কৃষক, ক্ষুদ্র খামারি, চরের বাথানের মালিকের গরু হাটে তোলা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, এবার কোরবানির হাট দেশি গরুতে ছয়লাব হয়ে যাবে।
মতলব উত্তরের হাটগুলো এখনো পুরোদমে জমে না ওঠায় অনেকেই পর্যায়ক্রমে পশু আনার পরিকল্পনা করেছেন। অস্থায়ী হাটগুলোতে কোরবানির পশু রাখার ব্যবস্থাও করেছে হাট কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্রির জন্য কোরবানির পশু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া এখনো পর্যায়ক্রমে পশু নিয়ে হাটে আসছেন তারা। কিছু সময় পরপরই হাটের উদ্দেশে ট্রাকভর্তি গরু ঢুকছে। নদীপথেও ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভর্তি করে পশু হাটে আনা হচ্ছে। ছেংগারচর পশুর হাট সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে এখনোই প্রচুর গরু উঠেছে হাটে। সবগুলোই দেশীয় গরু। বিক্রেতারা বলছেন, মানুষের বাসাবাড়িতে পশু রাখার যায়গা না থাকায় তারা এখনো কেনাকাটা শুরু করেননি। ঈদের তিন দিন আগে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেল হাটে সেসব গরু এসেছে সবগুলোই দেশি গরু। গাড়ীতে গরু-মহিষ-ছাগলসহ বিভিন্ন গবাদি পশু নিয়ে বেপারী, খামারি ও গৃহস্থদের আগমনে ভরে গেছে। হাটের সার্বিক নিরাপত্তা ছকও এরই মধ্যে পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে। বেপারীরা জানান, ভালো জায়গা দখল করতেই তারা আগেভাগেই গরু নিয়ে হাটে চলে এসেছেন। যদিও এ জন্য তাদের বাড়তি খরচ হচ্ছে। তবে ভালো দামে গরু বেচতে পারলে তা পুষিয়ে যাবে।
দেশে কোরবানির পশুর চাহিদার চেয়ে যোগান বেশি রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
এ বছর কোরবানির জন্য মতলব উত্তর উপজলায় ২৫৪ জন খামারীর ৯৬৪টি ষাঁড়, ৫৩৪টি বলদ, ৩৯২টি গাভী, ৩৭৬টি ছাগল ও ১৪৩টি ভেড়া প্রস্তুত আছে। মূলত ২০১৫ সালে মোদী সরকার সীমান্ত দিয়ে গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভিক্তিক ও গ্রাম পর্যায়ে কৃষিভিক্তিক গরু প্রতিপালন শুরু হয়। এখন দেশে উৎপাদিত গরু সারাবছরের গোশত এবং কোরনানির পশুর চাহিদা মেটাচ্ছে।
গরু বেপারীরা বলছেন, গোশতে দামের ওপর নির্ভর করে কোরবানির পশুর দাম। গত বছর ৬০০ টাকা কেজি দরে গরুর গোশত বিক্রি হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে ২০০ টাকা বেড়ে ৮০০ টাকা হয়েছে সেই গোশতের দাম। ফলে প্রতি মণ গোশতের দাম বেড়েছে আট হাজার টাকা। এতে করে তিন মণ ওজনের গরুপ্রতি দাম বেড়েছে ২৪ হাজার টাকা। গোশত ও গো-খাদ্যের দাম বাড়তি। ফলে হাট ও গৃহস্থের বাড়ি থেকে বাড়তি দামে গরু সংগ্রহ করে ঢাকায় আনা হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবহন খরচও বেশি। এসব কারণেই গরুর দাম বাড়তি।
এক গরু বেপারী বলেন, ২০টি গরু নিয়ে হাটে এসেছি দুইটি গরু বিক্রি করলাম। এবার গরুর দাম বাড়তি। কারণ গরুর খাবার ও পরিবহন খরচ বেশি।
চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বখতিয়ার উদ্দিন জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা জেলার বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিটি হাটে ব্যাংকের লোক থাকবে। গবাদিপশু ক্রেতা এবং বিক্রেতারা যেকোনো ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট এবং কিউআর কোড ব্যবহার করে ই-ব্যাংকিং লেনদেন সেবা গ্রহণ করতে পারবে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে পশুর ছবি আপলোড করে অনলাইনেও বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে।