চাঁদপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর প্রকোপ। গত ৫ দিনে আড়াই,শ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৩০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। এদের মধ্যে বর্তমানে বেশ কিছু ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার পুরুষ ওয়ার্ডে ও ৪র্থ তলার মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি এই হাসপাতালটিতে পুরুষ ওয়ার্ড এবং মহিলা ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে ওই ইউনিট গুলোতে মশারি টাঙিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদেরকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, চাঁদপুর আড়াই,শ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতালে এই চলতি মাসের ১ জুলাই থেকে ৫ জুলাই বুধবার পর্যন্ত ৫ দিনেই ৩০ জন নারী পুরুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে পুরুষ ওয়ার্ড ২৩ জন এবং মহিলা ওয়ার্ডে সর্বমোট ৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ড ও মহিলা ওয়ার্ডের ডেঙ্গু ইউনিটে বর্তমানে বেশ কিছু ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়া এপ্রিল মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত গত ৩ মাসে হাসপাতালে সর্বমোট ৮০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর এমন তথ্য জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা নুরুদ্দিন মোঃ জাহাঙ্গীর। তিনি জানান, গত ৩ মাসে এপ্রিল মাসে ৪ জন,মে মাসে ৮ জন এবং জুন ৬৮ জন এবং চলতি মাসের ৫ তারিখ বুধবার পর্যন্ত ৩০ জন। সর্বমোট ১১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন।
রোগীর স্বজনরা জানান তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রচন্ড জ্বরে ভুগছিলেন তাদের জ্বর না কমায় তাদের চিকিৎসার জন্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসকরা তাদের পরীক্ষা করে তারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বলে জানতে পারেন।
হাসপাতালে ডিউটিরত নার্সরা জানান, ভর্তিকৃত রোগীরা গত কয়েকদিন পূর্বে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তাদের রক্ত পরীক্ষা করলে তারা ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের বিষয়টি সনাক্ত হয়।
বর্তমানে তাদেরকে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার পুরুষ ওয়ার্ডে এবং মহিলা ওয়ার্ডে মশারি টানিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে দেখা গেছে।
এদিকে হাসপাতালের বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, ডেঙ্গু মশার কামড়েই কিন্তু তারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে বর্তমানে চাঁদপুরে মশার উপদ্রব বেশি। নিয়মিত মশা নিধনের ওষুধ না দেওয়া হলে ডেঙ্গু রোগের প্রভাব আরো বাড়তে পারে বলে তারা মনে করছেন।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ এ কে এম মাহাবুবুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ড এবং মহিলা ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট স্থাপন করেছি এবং সেখানে ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীদেরকে মশারি টাঙিয়ে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
ডেঙ্গু রোগী সম্পর্কে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও বর্ষা মৌসুমে সাধারণ মশা ও এডিস মশার প্রজনন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। যার ফলে ডেঙ্গু জ্বর ও চিকুনগুনিয়া রোগ ছড়ায়।
তিনি বলেন,ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তি ডেঙ্গু ভাইরাসের মাধ্যমে এবং এই ভাইরাসবাহিত এডিস ইজিপ্টাই নামক মশার কামড়ে হয়ে থাকে। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি চার থেকে ছয়দিনের(৩-১৩ ক্ষেত্রে) মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটি ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বাসা বাড়ির ফুলের টবে পানি জমিয়ে না রাখা, ড্রেন পরিস্কার রাখা এবং বাসি বাড়িও পরিস্কার পরিছন্ন রাখতে হবে।