সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৯ সালের এই দিনে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ঢাকাসহ সারা দেশে কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ এবং স্মরণসভাসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানকে স্মরণ করবে জাতীয় পার্টি।
ঢাকায় জাতীয় পার্টির কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল ৯টায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মিলনায়তনে হবে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত। বিকাল ৩টায় কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি এতে সভাপতিত্ব করবেন। স্মরণসভায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্মরণে রাজধানীর শ্যামপুর ও জুরাইনে তিন দিনের কর্মসূচি পালন করবে দলটির কো-চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সংসদ-সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার উদ্যোগে জাতীয় পার্টি। এ সময় দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে। এছাড়া জাতীয় পার্টি উত্তরের সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টুর উদ্যোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একইরকম কর্মসূচি পালন করা হবে। এ ছাড়াও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের উদ্যোগেও নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পরে তার পরিবার রংপুরে চলে আসে। রংপুরেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেন। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এরশাদ। ১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ওই বছরই আগস্ট মাসে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসাবে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদকে সেনাবাহিনী প্রধান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৯১ সালে এরশাদ গ্রেফতার হন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় এরশাদ পাঁচটি করে আসনে বিজয়ী হয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেন। ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি জামিনে মুক্ত হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন তিনি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তার দল ২৭টি আসনে জয়ী হয়। এরপর দশম ও চলতি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। চলতি একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসাবে দায়িত্ব পালনের মধ্যেই অসুস্থ হন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সিএমএইচে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন এবং সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
রংপুর ব্যুরো জানায়, এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করতে রংপুরে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, রংপুর মহানগর-জেলা সভাপতি ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, আজ সকাল ৬টায় জাতীয় পার্টির সেন্ট্রাল রোডের জেলা-মহানগর কার্যালয়সহ উপজেলা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, কুরআন খতম, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাইকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদের জীবনী ও ভাষণ প্রচার করা হবে। বেলা ১১টায় নগরীর দর্শনা মোড় পল্লি নিবাসে এরশাদের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, কবর জিয়ারত, দোয়া এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বাদ জুমা বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ দোয়া করা হবে। এ ছাড়াও জেলার প্রতিটি পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।