চাঁদপুরের হাইমচরে পরকীয়ার জেরে নিজ ছেলেকে হত্যার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১।
গত ২৩ আগস্ট বুধবার চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত আরিফ হত্যায় জড়িত মাসহ দুজনের মৃত্যুদণ্ড, দুজনের যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ প্রদান করে।
এরই প্রেক্ষিতে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। র্যাব-১১ গোয়েন্দা দল গোপন তথ্যের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামীর অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
৩১ আগস্ট বৃহস্পতিবার র্যাবের অভিযানে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানাধীন মাওয়া এলাকা হতে মোঃ ইউসুফ মোল্লাকে (৩৬) গ্রেফতার করে চাঁদপুরে হস্তান্তর করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামির সুত্র ধরে পৃথক আরেকটি অভিযানে ১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানাধীন কাঁচপুর এলাকা হতে মোঃ মাহবুব মোল্লাকে (৩৮) গ্রেফতার করা হয়। আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা গেছে, খুকি বেগম জয়নাল গাজীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান। এ কথা জানতে পারেন খুকির ছেলে আরিফ হোসেন। এ নিয়ে মা-ছেলের সম্পর্কের অবনতি হয়। এরপর ২০১৫ সালের শুরুর দিকে আরিফ মাকে না জানিয়ে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে উত্তর আলগী ইউনিয়নের আবদুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তারকে (১৯) বিয়ে করেন। তাঁদের বিয়ে খুকি বেগম প্রথমে মেনে না নিলেও একপর্যায়ে মেনে নেন। তবে মায়ের সঙ্গে ছেলে ও পুত্রবধূর বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। এর জেরে মা খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর তিনি ছেলের বউ আসমাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এরপর ১৮ নভেম্বর খুকি বেগম পরিকল্পনামাফিক নিজ বাড়িতে জয়নাল গাজী ও অন্য আসামিদের ডেকে আনেন। তাঁরা আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে এবং ব্লেড দিয়ে পোঁচ মেরে মৃত্যু হয়েছে মনে করে ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যান। পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানান, ডাকাতেরা আরিফকে জখম করে ফেলে গিয়েছে। আসমা তাৎক্ষণিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন এবং আরিফকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে মতলব ফেরিঘাট পার হওয়ার পর সকাল ৯টার দিকে আরিফের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওই দিনই আসমা শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা করেন।
এ মামলা তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় হাইমচর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক মো. নুর মিয়াকে। তিনি মামলাটি দীর্ঘ এক বছর তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. জয়নাল আবেদীন।
র্যাব-১১ জানায়, এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ২ জন আসামী এখনো পলাতক আছেন। পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে র্যাব’র অভিযান অব্যাহত রয়েছে।