‘ নদী, তুমি কোন কথা কও?/অশথের ডালাপালা তোমার বুকের ‘পরে পড়েছে যে,/জামের ছায়ায় তুমি নীল হ’লে./আরো দূরে চলে যাই/সেই শব্দ সেই শব্দ পিছে-পিছে আসে;/নদী না কি?/নদী, তুমি কোন কথা কও?'(জীবনানন্দ দাশ)।
প্রাচীন সভ্যতার বিজ্ঞ মানুষজনের অনেক অদ্ভুত বিশ্বাস ছিল যা আধুনিক বিজ্ঞান ও পরিবেশ শাস্ত্র যার বেশ কিছু আজো মান্য করে। যেমন, যে শহরে নদী নেই সেই জনপদবাসী অভাগা। যত সুন্দর করেই নগরায়ন করো না কেন, নদীর কোনও বিকল্প নেই। হয়না! হতে পারেনা!
আমাদের চাঁদপুর শহরে নদী আছে। আছে পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া তিনটি নদীর মোহনা।
প্রকৃতির নিবিড় মমতায় পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া বিধৌত চাঁদপুর যেনো এক রূপ নগরের রাজকন্যা। যার রূপের যাদুতে মুগ্ধ হয়ে নেমে আসে আকাশের চাঁদ। মেঘনা ডাকাতিয়ার জলজ জ্যোৎস্নার বিগলিত স্রোতধারায় পুষ্ট, ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এক নিবিড় শ্যামল জনপদের নাম তাই চাঁদপুর।
নদী সরকারি সম্পদ নয় নদী জনগণের সম্পদ। নদীরে ভালোবাসি বল্লে নদী ও বালু খেকোর বিপক্ষে যাবে! এই আবার কোন মত ! আজকাল নদীর উপযোগিতা নিয়ে উপযুক্ত কথা বলতে যেন বেগ পেতে হয় মেঘনা পাড়ের আমাদের। অথচ, জীবন ও জীবিকা দিয়েই আমরা বুঝি নদী আমাদের কতটা প্রাণ। নদীর পরিবেশ ও প্রতিবেশগত এবং সাংস্কৃতিক মূল্য বুঝি তথ্য ও তত্ত্ব দিয়ে।
২৪ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব নদী দিবসে গত বছর (৩১ মার্চ ২০২২) চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নদী কমিশনের উপস্থিতিতে এক সভায় নদী কমিশনের সদস্য আক্তারুজ্জামানের মূল্যবান একটি কথা খুব বেশি মনে পড়ল। তিনি বলেছিলেন, উচ্চ আদালতের এক রায়ে নদী সরকারি সম্পদ নয়, নদীকে জনগণের সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তাই নদী হলো জনগণের এক জীবন্ত সত্বা। সেজন্য দেশের প্রত্যেক নাগরিককে নদীকে ভালোবাসতে হবে এবং নদী রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
নদীমাতৃক দেশের জনসাধারণ নদীর জন্য দরদী হবে, এ আর নতুন কী? পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়ার তীরবর্তী বাসিন্দা হিসেবে নদীর প্রতি আমাদের অধিকতর ভালোবাসা থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নদ-নদীর ‘পক্ষে’ কথা বলা যাবে না! নদীর পক্ষে কথা বল্লে নদী ও বালু খেকোর বিপক্ষে যাবে!
তারপরও আসুন, আমরা সবাই নদীকে ভালোবাসি, মায়ের মত পরম মমতা দিয়ে, দরদ দিয়ে। নদী ও বালুখেকো নিপাত যাক, আমারদের নদী মুক্তি পাক।