শহীদ এবি তালুকদার নামে সড়ক নামকরণের দাবী পরিবারের
আজ শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। চাঁদপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবি এবি তালুকদারের ৫২ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭১ সালের ১৪ ই ডিমেস্বর দেশ স্বাধীনতার জন্য বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিতে হয়েছে চাঁদপুর সদর উপজেলার ২ নং আশিকাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম বশির আহমেদ তালুকদারের বড় ছেলে শহীদ বুদ্ধিজীবি এবি তালুকদাররের জীবন।
এবি তালুকদারের পুরো নাম আবুল বাশার তালুকদার ওরফে বাচ্ছু। ১৯৩৩ সালে চাঁদপুর সদর উপজেলার ২নং আশিকাটি ইউনিয়নের সেঁনগাও গ্রামের তালুকদার বাড়ীতে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন আবুল বাশার তালুকদার।
১৯৪৭ সালে চাঁদপুর সদরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করে তৎকালীন পাকিস্থান বিমান বাহিনীতে তিনি যোগদেন। ১৯৬২ সালে বিমান বাহিনীর চাকুরী ত্যাগ করে তৎকালীন পি,আই,এ চাকুরী নেন। তারপর থেকে দাবি আদায়ের সংগ্রামে পাকিস্থানীদের বিরুদ্ধের বিক্ষোভ ঘেরাও কর্মসূচীসহ সব ব্যাপারে আন্দোলনের প্রথম সারিতে থেকে তিনি সংগ্রাম করে গেছেন।
এবি তালুকদার ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন একজন ভালো ফুটবল খেলোয়াড় অত্যন্ত সৎ ও কোমলমতি হাস্য উজ্জলের এক সাদা মনের মানুষ। কৃতিত্বের উদাহরণ স্বরুপ জেলা চ্যাম্পিয়ন কাপ বিজয়ী দল হিসাবে তার ও দলের ছবি এখনও বাবুহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষের অফিস কক্ষে ছবি সাটানো আছে। তার প্রাণে উৎসাহ ছিল প্রচুর। তিনি সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ঢেলে দিতেও ভয় করতেন না। শহীদ আবুল বাশার তালুকদার ঢাকা মতিঝিল বিমান অফিসের কার্গো সেকসনের সিনিয়র অ্যাসিসটেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। শ্রমিক নেতা হিসাবেও তিনি নিজে সকলের কাছে প্রিয় তালুকদার ভাই হিসেবে পরিচিত। ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত তৎকালীন কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংসদের (বর্তমান শ্রমিকলীগ) এর সদস্য ছিলেন। তারপর তিনি অসুস্থ্যজনিত কারনে সে পদ থেকে অব্যাহতি নেন। সুস্থ হয়ে সেই বছরেই শ্রমিক সংসদের সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়কারী হিসাবে দীর্ঘদিন কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য সকলকে উৎসাহিত করেন। বুকে অপারেশন থাকায় তিনি অস্ত্র চালানো থেকে বিরত থাকলেও মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে যাতায়াত করতেন এবং একজন বিমাণ বাহিনীর সৈনিক হিসাবে যুদ্ধের কলাকৌশল ও পরামর্শ দিতেন এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের। মুক্তিযুদ্ধে সার্বিক পরিস্থিতি জানার জন্য এবং বিশেষ সংবাদে তিনি নভেম্বরের শেষের দিকে ঢাকায় যান। আর ফিরে আসতে পারেন নাই। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখে কাজ করার কারণে ১৯৭১ সালের ১৪ ই ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকায় তার নাখাল পাড়া বাসা থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী পাকিস্থান ও আলবদর বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি আর বাসায় ফিরে আসতে পারেন নাই। ঢাকা রায়েরবাজার বদ্ধ ভূমিতে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পর অনেক খোঁজাখুজি করে ঢাকার রায়ের বাজারে বদ্ধ ভূমিতে বুদ্ধিজীবিদের লাশের সাথে তার লাশ পাওয়া যায়। তারপর তেজগাঁও থানার পুলিশ ও পরিবারের লোকজন জিডি করে। তৎকালীন জিডি নাম্বার (৭৩) ১৯৭১ সাল। সেখান থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে ঢাকায় নাখাল পাড়াস্থ কবরস্থানে শহীদ আনোয়ারা কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
শহীদ আবুল বাসার তালুকদার রেখে গেছেন ২ স্ত্রী ও তিন কন্যা বৃদ্ধ মা-বাবা ও ছোট ভাই বোন। শহীদ আবুল বাশার তালুকদার দেশের জন্য অকাতরে ঢেলে দিয়ে গেছেন তার জীবন। কিন্তু পাননি সরকারী স্বীকৃতি ও কোন অনুদান। এখনও তার গ্রামে বা অন্য কোথাও তার নামে নাম করণ করা হয়নি কোন সড়ক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা স্থাপত্য। শুধু মতিঝিল বিমাণ অফিস বলাকা ভবন গেইটে খোদাই করে লেখা আছে শহীদের তালিকায় এবি তালুকদারের নাম। শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে আবুল বাশার তালুকদারের পরিবার ও এলাকাবাসীর একটাই দাবি, আশিকাটি ইউনিয়নের তার নিজ গ্রাম সেঁনগাও গ্রামের সড়কটি যেন শহীদ আবুল বাসারের নামে নাম করণ করা হয়। সেজন্য তারা চাঁদপুর জেলা প্রশাসন সহ উধ্বর্তন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। আবুল বাশার তালুকদারের পিতা পুত্র শোকে অসুস্থ্য হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। তার পিতা ছিলেন সফল চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক।
এ ব্যাপারে আবুল বাশার তালুকদারের ছোট ভাই বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক মোঃ জাকির হোসেন জাহাঙ্গীরের সাথে ফোনালাপ কালে তিনি বলেন, তার ভাইয়ের নামে এখন পর্যন্ত কোন সরকারী অনুদান ও সড়ক বা প্রতিষ্ঠানের কোন নামকরণ হয়নি। সরকারী কোন আর্থিক অনুদান পেলে অসুস্থ্য ও সুস্থ্যদের সাহায্য একটি শিক্ষা কল্যান ট্রাস্ট গঠন করবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।