বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে চাঁদপুর সদর উপজেলার হোছাইনপুর আলিম মাদ্রাসার সেই অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন করেছে উপজেলার ২নং আশিকাটি ইউনিয়নের হোসেনপুর এলাকাবাসী। উক্ত এলাকাবাসীকে সন্দেহ করে থানায় মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) সকালে হোছাইনপুর আলিম মাদ্রাসার সামনের সড়কে মানববন্ধনে অংশ নেয় উক্ত এলাকার সকল বয়সী নানা শ্রেনী পেশার মানুষ।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া রুবেল মাল, ফয়সাল পাটওয়ারী, রাকিব প্রধানীয়া, সুলতান প্রধানীয়া, মনির প্রধানীয়া সহ কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, আমাদের এলাকার এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেক অধ্যক্ষ এসেছে। কখনো কোনদিন এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে কিছু বলে না। এমনকি যখন এই মাদ্রাসাটি টিনশেড ছিল কখনো কোন চুরির ঘটনাও ঘটেনি। কিন্তু এই অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন আসার পর এলাকাবাসীকে বিভিন্ন মাধ্যমে হয়রানি করে আসছে। এবং গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে এক লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পরিকল্পিত চুরির ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসীকে সন্দেহ করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে আমাদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করেন। মানববন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, এই অধ্যক্ষ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপায়ে বাড়তি টাকা নিয়ে থাকেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে এই মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুন্ন করতে তিনি উঠে পড়ে লেগেছেন। আমরা এলাকাবাসী অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিনের পদত্যাগ চাই। নিজ ইচ্ছায় স্বনামধন্য এ মাদ্রাসা হতে অব্যাহতি নিবেন নতুবা তাকে অপমানের সাথে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়া হবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী তার জিম্মি থেকে মুক্ত হতে চায়। আমরা প্রশাসন ও কমিটির সকল নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ করবো, এই অধ্যক্ষকে এখান থেকে সরিয়ে দিয়ে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োজিত করে মাদ্রাসার সুনাম ফিরিয়ে আনুন। মানববন্ধন শেষে পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
জানা যায়, গত ২৭ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে চাঁদপুর সদর উপজেলার হোছাইনপুর আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষের কক্ষের জানালার গ্রিল কেটে টেবিলের ড্রয়ার থেকে রহস্যজনকভাবে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ৩১ ডিসেম্বর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোঃ মহসিন আলম সহ পুলিশ ও বিজিব সদস্যরা। মাদ্রাসার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন শিক্ষক, কর্মচারী ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানে ৫ লক্ষ টাকার একটি সরকারি অনুদান আসে। এর মধ্যে ৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা মাদ্রাসার অবকাঠামো উন্নয়ন সহ বিভিন্ন কাজে ব্যায় করা হবে। বাকী এক লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে ১ লক্ষ টাকা শিক্ষকদের প্রণোদনা হিসেবে আর ৭৫ হাজার টাকা তালিকাভুক্ত কিছু মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেয়ার কথা। গত ১৭ ডিসেম্বর একটি পোগ্রাম শেষে ৩১ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষনা করা হয় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এর আগেই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ নিজাম উদ্দিন ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে নিজের ড্রয়ারে রেখে যান বলে জানান তিনি।
এ ঘটনায় মাদ্রাসার পিয়ন নাজির আহম্মদ বাদী হয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে চাঁদপুর সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) লোকমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। চুরির ঘটনার দৃশ্য দেখে তিনি বিষয়টি মাদরাসা কমিটির সঙ্গে বসে সমাধান করার পরামর্শ দেন। এদিকে গত রবিবার সকালে সকল শিক্ষক-কর্মচারীকে মাদ্রাসার অফিস থেকে বের করে মাদ্রাসার মূল ফটকে তালাবদ্ধ করে রাখেন স্থানীয় এলাকাবাসী। পরে চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোঃ মহসিন আলম এদিন দুপুর ১টায় সঙ্গীয় ফোর্স ও বিজিবি সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এবং মাদ্রাসার বাহিরে অবস্থান নেয়া এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সহ ৫জন কর্মচারীকে থানায় নিয়ে যান এবং প্রকৃত আসামীকে খুঁজে বের করার আশ্বাস প্রদান করেন উপস্থিত বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক জানান, গত ৩১ তারিখের পর থেকে অধ্যক্ষ মোঃ নিজাম উদ্দিন এখনো মাদ্রাসায় আসেন নি।