যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্সের’ করা ২০২৪ সালের পাসপোর্ট র্যাংকিংয়ে বিশ্বের ৮ম দুর্বল পাসপোর্টের তকমা পেয়েছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট। প্রতিষ্ঠানটি মঙ্গলবার বিশ্বের ১৯৯টি দেশের পাসপোর্ট সূচক প্রকাশ করেছে। হ্যানলি সূচক অনুযায়ী শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯৭তম। একই অবস্থানে রয়েছে বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন দেশ উত্তর কোরিয়া। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেপালের (৯৮তম), পাকিস্তানের (১০১তম) এবং আফগানিস্তানের (১০৪তম) তুলনায় শক্তিশালী অবস্থানে আছে। গত বছরের বৈশ্বিক পাসপোর্ট সূচকের ত্রৈমাসিক সংস্করণে বাংলাদেশি পাসপোর্টের অবস্থান ছিল ৯৬তম। এর আগে একই বছরের ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০১তম।
চলতি বছরের তালিকা অনুযায়ী, বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে বিশ্বের ২২৭টি গন্তব্যের মধ্যে ৪২টিতে ভিসা ছাড়া কিংবা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় ভ্রমণ করা যায়। বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে আগাম ভিসা ছাড়া ইউরোপের কোনো দেশে ভ্রমণ করা সম্ভব নয়।
হ্যানলি সূচক অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে মালদ্বীপের পাসপোর্ট (৫৮তম)। মালদ্বীপের পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই বিশ্বের ৯৪টি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। এরপরই রয়েছে ভারত (৮০তম), ভুটান (৮৭তম) ও শ্রীলঙ্কা (৯৬তম)। আর এই সূচকের একেবারে তলানিতে রয়েছে আফগানিস্তান (১০৪তম)। তালেবান শাসিত এই দেশের পাসপোর্টধারীরা মাত্র ২৮টি দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন।
চলতি বছর হ্যানলি সূচকে নজিরবিহীন এক অবস্থান দেখা গেছে। এ বছর বিশ্বের মোট ছয়টি দেশ সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকায় যৌথভাবে শীর্ষ অবস্থান দখল করেছে। আর এই ছয় দেশ হলো ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, সিঙ্গাপুর ও স্পেন। এসব দেশের নাগরিকরা ভিসা ছাড়া কিংবা অন অ্যারাইভাল ভিসায় বিশ্বের ১৯৪টি দেশ ভ্রমণ করতে পারেন।
১৯ বছর আগে হ্যানলি বৈশ্বিক পাসপোর্ট সূচক প্রকাশ শুরু করার পর থেকে এবারই প্রথম সর্বাধিক ছয়টি দেশ যৌথভাবে শীর্ষ স্থান দখল করলো। এদিকে, হেনলি সূচকে দ্বিতীয় স্থানে যৌথভাবে রয়েছে ফিনল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও সুইডেন। এই তিন দেশের পাসপোর্টধারীরা ১৯৩টি দেশে ভিসা ছাড়া বা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় ভ্রমণ করতে পারেন।
এছাড়া তৃতীয় স্থানে যৌথভাবে থাকা অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের নাগরিকরা ১৯২টি দেশে ভিসা ছাড়া বা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় প্রবেশ করতে পারেন। চতুর্থ স্থানে রয়েছে যৌথভাবে বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, নরওয়ে, পর্তুগাল ও যুক্তরাজ্য। এসব দেশের নাগরিকরা বিশ্বের ১৯১টি দেশে ভিসা ছাড়া বা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় ভ্রমণ করতে পারেন। আর যৌথভাবে পঞ্চম স্থানে থাকা গ্রিস, মাল্টা ও সুইজারল্যান্ডের পাসপোর্টধারীরা ১৯০টি গন্তব্যে ভিসা ছাড়া বা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় যেতে পারেন।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকায় ৬ নম্বরে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, নিউজিল্যান্ড ও পোল্যান্ড। সাত নম্বরে রয়েছে কানাডা, হাঙ্গেরি ও যুক্তরাষ্ট্র। আট নম্বরে এস্তোনিয়া ও লিথুয়ানিয়া। নয় নম্বরে লাটভিয়া, স্লোভাকিয়া ও স্লোভেনিয়া। আর ১০ নম্বরে রয়েছে আইসল্যান্ড।
অন্যদিকে, বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল পাসপোর্টের তালিকায় রয়েছে প্রথম থেকে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, পাকিস্তান, ইয়েমেন, সোমালিয়া। সাত নম্বরে যৌথভাবে রয়েছে লিবিয়া, নেপাল, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড। আট নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ ও উত্তর কোরিয়া। নবম অবস্থানে শ্রীলঙ্কা ও ইরিত্রিয়া। আর দশম স্থানে রয়েছে ইরান, লেবানন, নাইজেরিয়া ও সুদান। কোন দেশের পাসপোর্ট দিয়ে কত দেশে ভিসা ছাড়া বা অন অ্যারাইভাল ভিসায় প্রবেশ করা যায় ও ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (আইএটিএ) তথ্যের ভিত্তিতে শক্তিশালী পাসপোর্টের এই সূচক তৈরি করে দ্য হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্স। গত ১৯ বছর ধরে প্রতি তিন মাস অন্তর এই র্যাংকিং প্রকাশ করে আসছে তারা।