বয়স হইছে। অসুখ-বিসুখের শেষ নাই। একটু খবর নেইন যে আমরার বিষয়ডার (মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি) কোনো খবর আছে নি।’
এমন আকুতি মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করা চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের আয়শা বেগম। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার কথা থাকলেও তার এখনো তালিকাভুক্ত হননি। বহুবার আবেদন করেও এখনো তালিকায় নাম লেখাতে পারেননি। পেরিয়েছে স্বাধীনতার ৫২ বছর, গড়িয়েছে অজস্র জল। তার পরিচিত সব সহযোদ্ধাই পেয়েছেন বীরত্বসূচক রাষ্ট্রীয় খেতাব। কিন্তু সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার পরেও খেতাব পাননি তিনি। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় আয়শা বেগম নিজ বাড়িতে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়েছেন, রান্না করে খাওয়াইছেন, অসুখ বিসুখে সেবা করেছেন, যদ্ধের সময় আস্ত্রগুলো জমা রেখেছেন, পরিস্কার করেছেন, আবার যুদ্ধে যাওয়ার সময় তাদের হাতে অস্ত্রগুলো তুলে দিয়েছেন। জীবনের পড়ন্ত বেলায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি চান আয়শা বেগম।
মতলব দক্ষিন উপজেলার উত্তর বহরি জলিল কাজী বাড়িতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল। সেখানে ১৬ বছরের তরুনী আয়শা সে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। তার পিতা আব্দুর রহমান, মাতা করিমন নেছা। তার বাড়িতে ক্যাম্পের কমান্ডার সাইদুল রহমান, ছিদ্দিক মাষ্টারসহ অজস্র মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দীর্ঘ ৯মাসের যুদ্ধোর সময় আয়শা বেগম অকাতরে সেবা দিয়ে তাদের জীবন চাঙ্গা করে রেখেছেন। আশয়া বেগম সে এলাকার কারা কারা রাজাকার ছিলেন, রাজাকারের তত্ত্ব দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা সার্বিক ভাবে সহযোগীতা করেছেন। দীপ্ত যৌবন বয়সে যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না বান্নাসহ যাবতীয় সেবা করা তখনকার সময় বিরল ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতিতও হয়েছেন তিনি। প্ররন্ত বেলায় তাঁর নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকাতে যুক্ত করতে বর্তমান সরকারের কাছে তার আবেদন ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আয়শা বেগম বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যে তরুনী শরীরের শক্তি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেছেন, এখন তার সেবা করার জন্য মানুষ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
আয়শা বেগম এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, স্বাধীনতার এতো বছর হলেও এখনো সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা ও স্বীকৃতি পাই না। অনেক কষ্ট করেছি স্বাধীনতার সময়, নির্যাতিত হয়েছি, তিনি অনেকটা আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘এত কিছু বিসর্জন দেওয়ার পরও যদি আমার প্রাপ্য সম্মান টুকু না পায়, তাহলে এই দেশ স্বাধীন হওয়ার কোনো মানে হয় না