চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের মমতাজ বেগম রিক্তাকে (৩৫) হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে হাত পায়ের রগ কেটে হত্যা করে নিহতের আপন ভাতিজা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান শুভ। শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে ফরিদগঞ্জ থানায় প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ সার্কেল) পঙ্কজ কুমার দে।
গ্রেপ্তারকৃত মেহেদী হাসান শুভ ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের চরমান্দারি এলাকা মালেকের ছেলে। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী। নিহত মমতাজ বেগম রিক্তা (৩৫) সম্পর্কে তার ফুফু হয়।
মমতাজ বেগম রিক্তা (৩৫) একই এলাকার মৃত এমদাদ উল্লাহর ছোট মেয়ে। তিনি গৃদকালিন্দিয়া বাজারের বধুবরণ বিউটি পার্লারের মালিক। তার স্বামী দুবাই প্রবাসী হারুনুর রশিদ (রাকিবুল হাসান)।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ সার্কেল) পঙ্কজ কুমার দে বলেন, বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে ওই এলাকা থেকে মমতাজ বেগম রিক্তার বসত ঘরের টয়লেটের ভেতরে কম্বলে জড়ানো মাথায় জখম, হাত ও পায়ের রগ কাটা অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর প্রথমে রিক্তার বড় বোনের ছেলে বাপ্পিকে জিজ্ঞেসাবাদের জন্য আটক করা হয়। বাপ্পি আমাদেরকে জানায় ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তার খালা রিক্তা পার্লার থেকে বাড়িতে চলে যায়। ওই সময় রিক্তার বাপ্পির সঙ্গে গৃদকালিন্দিয়া বাজারে দেখা হয়। এ ছাড়া সে আর কিছু জানে না। পরবর্তী সময়ে রাত ৮টার পর বাপ্পি বাড়িতে এসে দেখে টয়লেটের ভেতরে কম্বল মোড়ানো অবস্থায় তার খালার মরদেহ পড়ে আছে। পরে আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলি এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করি। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামি মেহেদী হাসান শুভকে আটক করা হয়। সে রিক্তার আপন ভাই মালেকের ছেলে। তারা সর্ম্পকে আপন ফুফু-ভাতিজা। তাকে আটক করার পর সে স্বীকার করে রিক্তাকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে হাত পায়ের রগ কেটে হত্যার করেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, শুভ ও রিক্তা পাশাপাশি বাড়িতে থাকে। তাদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ আছে। ঘটনার দিন রিক্তা সন্ধ্যার সময় বাড়ি যাওয়ার সময় শুভ পেছন থেকে রিক্তাকে সালাম দেয়। এক পর্যায়ে সে শুভকে তাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ঘটনার দিন রিক্তার সঙ্গে শুভর কথা কাটাকাটি হয়। ওই সময় রিক্তা শুভর বাবা-মায়ের নামে কটু কথা বলে। পরে সে এক পর্যায়ে বাবা-মায়ের নামে কটু কথা সইতে না পেরে টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোলে দেখানো খুনের আদলে হাতুড়ি দিয়ে ফুফুর মাথা আঘাত করে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ছুরি দিয়ে হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয় এবং মরদেহ ঘরে থাকা লেপে মুড়িয়ে বাথরুমে ফেলে রাখে। পুলিশ তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক চরমান্দারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়ি ও কাটার উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রিক্তার দুবাই প্রবাসী স্বামী হারুনুর রশিদ (রাকিবুল হাসান) বাদী হয়ে থানায় ফরিদগঞ্জ থানার মামলা দায়ের করেন। প্রেসব্রিফিংয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) প্রদীপ মন্ডল ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুমন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।