চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর পাড়ে চরাঞ্চল থেকে আসা সবজিসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী নিয়ে বসে দুই ঘন্টার বাজার। এই বাজারে মাসে কমপক্ষে ১ থেকে সোয়া কোটি টাকার লেনদেন হয়। প্রায় একযুগেরও অধিক সময় আগে স্থানীয়দের উদ্যোগে উপজেলার তেলিরমোড় লঞ্চঘাটে এই বাজার গড়ে উঠে। চরাঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত লোকজন তাদের উত্পাদিত খাদ্য সামগ্রী ভাল দামে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন এই বাজারে।সম্প্রতি এই বাজারে গিয়ে কথা হয় ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাথে। সকাল ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে বাজারের বেচাকেনা শেষ হয়। ট্রলার দিয়ে চরাঞ্চল থেকে সব্জিসহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী নিয়ে আসেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। একই সাথে নদীতে আহরণ করা ইলিশসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছও বিক্রি হয় বাজার সংলগ্ন আড়তে। ভোর থেকেই মেঘনা পাড়ে অপেক্ষমান থাকেন পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। মাঝের চর থেকে আসা কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, তিনি মৌসুমে সব ধরণের সব্জি উত্পাদন করেন। দাম ভাল পাওয়ায় বছর জুড়ে এখানে এনে সব্জি বিক্রি করেন। তার জমিতে লাউ, কুমড়া, পেপে, লাল শাক, পুঁই শাক, মুলা, কাঁচা কলা উত্পাদন হয়। একই এলাকার যুবক আনোয়ার দুটি হাঁস নিয়ে এসেছেন বিক্রি করতে। তিনি দুটি হাঁস বিক্রে করেছেন ১১০০ টাকায়। এসব হাঁস ব্যবসায়ীরা শহরে নিয়ে বিক্রি করেন ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায়।
বাজারের আড়ত্দার নেছার আহমেদ তালুকদার জানান, চরাঞ্চলের লোকজন আগে তাদের উত্পাদিত সব্জি, দুধ, মাছ, মুরগী ও হাস নিয়ে বিক্রি করার জন্য উপজেলার বিভিন্ন বাজারে আসতেন। কিন্তু তারা সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত ছিলেন। প্রায় এক যুগ আগে এই ঘাটে মেঘনা নদীর পাড়েই দুই ঘন্টার বাজার করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর থেকে চরাঞ্চলের লোকজন এখানে তাদের উত্পাদিন সব ধরণের পন্য সঠিক মূল্যে বিক্রি করতে পারছেন।
বাজারের আরেক ব্যবসায়ী সৈয়দ পাটওয়ারী জানান, প্রতিদিন এই বাজারে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা বিক্রি হয়। তবে শীতের সময় বিক্রি বেড়ে যায়। কারণ তখন চরাঞ্চলে উত্পাদিত বিষমুক্ত সব্জির চাহিদা বেড়ে যায়। যে কারণে খুচরা বিক্রেতার সংখ্যা বাড়ে। এছাড়া হাঁস ও মুরগী এখান থেকে ক্রয় করে সরাসরি শহরে নিয়ে বিক্রি করা হয়।
এই বাজারে মৌসুমী উত্পাদিত সব্জি বেশি বিক্রি হয়। কাজী চৌকিদার, নওয়াব মোল্লা, খলির চৌকিদার, বাদশা পেদা, খাজা আহম্মদ গাজী ও সোলায়মানের আড়তে মেঘনা নদীর পশ্চিমের ইশানবালা মধ্যচর, মাঝির বাজার, বাংলা বাজার, সাহেবগঞ্জ থেকে কৃষকরা তাদের উত্পাদিত সব্জি বিক্রি করতে নিয়ে আসেন।
খুচরা বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. বাবুল ও মাছুম হোসেন জানান, তারা এই দুই ঘন্টার বাজার থেকে সব্জি ক্রয় করে উপজেলার আলগী বাজারসহ পাশবর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রি করেন। কারণ এসব এলাকায় চরাঞ্চলে উত্পাদিত সব্জির কদর বেশি এবং বিক্রি করে লাভও ভাল হয়।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী জানান, জেলার কয়েকটি উপজেলায় চরাঞ্চল রয়েছে। এর মধ্যে হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিমের চরাঞ্চলগুলোতে বছরজুড়ে কৃষকরা মৌসুমী শাকসব্জি উত্পাদন করে। এ কারণে চরাঞ্চলের অনেক কৃষক স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা। সেই কাজটিই এখন আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অব্যাহত রেখেছেন। আমি আশা করছি চরাঞ্চলের কৃষকরা পরিকল্পিতভাবে কৃষি আবাদ বাড়ালে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় সরবরাহ করতে পারবে।