ইউক্রেনের কয়েক ডজন বিদ্যুৎ স্থাপনায় বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে দেশটির ১০ লাখের বেশি মানুষ বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এসব হামলা চালানো হয় বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দপ্তর জানিয়েছে।
রাশিয়ার হামলায় খারকিভ অঞ্চলের সাত লাখ বাসিন্দা বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় ওদেসা ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় নিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলে দুই লাখ করে বাসিন্দা বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। এ ছাড়া মধ্যাঞ্চলীয় পোলতভা অঞ্চলের ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না বলে প্রেসিডেন্ট দপ্তরের উপপ্রধান ওলেকসি কুলেবা আজ শুক্রবার জানিয়েছেন।
এদিকে রাশিয়ার হামলায় জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি সরবরাহ লাইনের একটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন ইউক্রেনের জ্বালানিমন্ত্রী জেরমান গালুশচেঙ্কো।
ইউক্রেনের আণবিক শক্তি সংস্থা বলেছে, এ পরিস্থিতি খুবই ভয়ংকর এবং যেকোনো মুহূর্তে জরুরি পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ইউরোপের সর্ববৃহৎ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দখল করে নেন রুশ সেনারা।
ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, রাতে আকাশপথে রাশিয়ার হামলায় সাতটি অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ হামলায় অনেক বিদ্যুৎ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইউক্রেনার্গো টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, ‘কয়েক ডজন বিদ্যুৎ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাতটি অঞ্চল ব্ল্যাকআউটের কবলে পড়েছে।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, কয়েক ধরনের ৯০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ‘ইরানের তৈরি’ ৬০টি ড্রোন ব্যবহার করে বৃহস্পতিবার রাতে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
জেলেনস্কি বলেন, যতটুকু সম্ভব রুশ সন্ত্রাসীদের হামলার লক্ষ্যবস্তু বিশ্ববাসী স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন—বিদ্যুৎকেন্দ্র, জ্বালানি সরবরাহ লাইন, জলবিদ্যুৎ বাঁধ, সাধারণ আবাসিক ভবন, এমনকি বৈদ্যুতিক বাসেও হামলা চালানো হচ্ছে।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসব হামলায় কমপক্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৪ জন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও তিনজন।
এ হামলার পর আবারও পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে অস্ত্র সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘অস্ত্রসহায়তা আমাদের দেশে আসতে যতটা বিলম্ব করছে, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কিন্তু ততটা বিলম্ব করছে না।’
জেলেনস্কি বলেন, ‘জনগণ, স্থাপনা, বাড়িঘর এবং বাঁধ রক্ষায় আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন। আমাদের ঠিক কী প্রয়োজন, তা আমাদের অংশীদারেরা জানে। তারা নিশ্চিতভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে। মস্কোর এই অমানুষদের হাত থেকে অবশ্যই জীবন বাঁচাতে হবে।’
এর আগে বুধবার রাতে রাজধানী কিয়েভেও বড় ধরনের হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া। এদিন ৩১টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার দাবি করে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী। ভূপাতিত হওয়া ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পড়ে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে