টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে বাজারে কমতে শুরু করেছে তরমুজের দাম। দুই দিন আগে কেজিপ্রতি ৭০-৮০ টাকা বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। অনেক জায়গায় আবার বিক্রি হচ্ছে পিস হিসেবে। দাম কমেছে পিস হিসেবে বিক্রিতেও। তবে কোনো কোনো জায়গায় তরমুজের মান ও দামের ভিন্নতা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের।
বিক্রেতারা বলছেন, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কৃষকরা ক্ষতি এড়াতে তরমুজ বাজারে নিয়ে আসছেন। এছাড়া ফলন ভালো হওয়ায় বিক্রির পরিমাণও বেড়েছে। ফলে কম দামে তরমুজ কিনতে পারছেন ক্রেতারা। এর মধ্যেও স্বাদ ও রংহীন সাদা তরমুজ থাকায় অনেকে আপাতত এই ফলটি বিক্রি থেকে বিরত থাকছেন।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, বাজারে এখন তরমুজের দাম কিছুটা কম হলেও স্বাদহীন হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফলে দাম কমলেও ভালো তরমুজ পাওয়ার আশা অনেকটা নিরাশায় পরিণত হচ্ছে অনেকের। এছাড়া একেক জায়গায় একেক দামে তরমুজ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলার তরমুজ বিক্রেতা মো. জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা কেজিতে তরমুজ কম বিক্রি করি। যারা চান তাদের দেই, নইলে কেজি হিসেবে দেই না। কেজিতে বিক্রি করলে আমরা ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি, বেশি পিস নিলে ৪০ টাকায়ও বিক্রি করছি। কারও বেশি দামে বিক্রির সুযোগ নেই। আমরা পাইকারি কিনি, তারপর সেগুলো সিঙ্গেল বা অনেক পিস একসঙ্গেও বিক্রি করি। কাস্টমার যদি কেজিদরে নিতে চায় তখন সেভাবেই বিক্রি করি। এখন তরমুজ লাল হচ্ছে, খেতেও ভালো। বেচাবিক্রি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। দিনে আমরা ৪০০ থেকে ৫০০ পিস বিক্রি করতে পারছি।’ শনির আখড়ার বাসিন্দা মো. সেলিম যাত্রাবাড়ী এসেছেন তরমুজ কিনতে। তরমুজের দাম কেমন দেখছেন- জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওনারা এগুলো গ্রেড পিস (বড়, ছোট, মাঝারি) হিসেবে কেনেন, কিন্তু কেজি হিসেবে বিক্রি করেন অনেকেই। ২৮০ টাকা পিস কিনে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করুক, তাতে আপত্তি নেই। কারণ এতে গ্রাহকের কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু ৩০০ টাকার জিনিস ৫০০ টাকা চাইলে গ্রাহকের জন্য জুলুম হয়ে যায়, সবার পক্ষে কেনা সম্ভব না। একটি তরমুজের দাম জানতে চাইলাম, তারা জানালেন ৫০০ টাকা, এটির ওজন হবে ১২ কেজির মতো। সেই হিসাবে ৪০ টাকা কেজি পড়ে, এটি ঠিক আছে। এটি হলে মোটামুটি খারাপ হবে না। তরমুজের ভেতরে কী আছে, উনিও বলতে পারবেন না, আমিও বলতে পারবো না। মূলত গ্রেড অনুযায়ী দামগুলো নির্ধারণ হয়, সেটি ঠিক রাখলে সমস্যা হওয়ার কথা না।’
যাত্রাবাড়ী আড়তের সামনে খুচরা তরমুজ বিক্রেতা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমরা খুচরা বিক্রি করলেও পাইকারির মতো দাম রাখি। সকাল থেকে ৩৫০ পিস বিক্রি করেছি। সাধারণ মানুষ এখান থেকে কিনতে পারেন। আমরা পিস হিসেবে বিক্রি করছি। বড় সাইজের একরম হিসাব, ছোট পিস হলে আরেক রকম। কিন্তু কেজি দরে বিক্রি করছি না। আমাদের এখানে হাইয়েস্ট (সর্বোচ্চ) ৫০০ দাম টাকা, সর্বনিম্ন ১০০ টাকাও আছে।’
এদিকে কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে তরমুজ পরিবহন করা ট্রাকের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। পটুয়াখালীতে গত সপ্তাহে ২২-২৫ হাজার টাকায় প্রতিটি ট্রাক চলাচল করলেও এ সপ্তাহে নেওয়া হচ্ছে ৪৫-৫০ হাজার টাকা। এ অবস্থায় ট্রাকমালিকদের কাছ জিম্মি হয়ে পড়েছেন সেই জেলার তরমুজ চাষি ও ব্যাপারীরা। এতে আরেক দফা দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে তরমুজের। পাইকারি দরে তরমুজ কিনতে আসা শাজাহানপুরের ব্যবসায়ী মো. গুলজার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আড়তদার ১০০ পিস আমার কাছে চাচ্ছে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। সেই হিসাবে আমরা পাইকারিতে প্রতি পিস কিনছি ১৩৫ টাকায়। এই স্থানের ভাড়া আছে। সবমিলে প্রতি পিস ১৫০ টাকাই পড়বে। এগুলো ওজনে সাড়ে চার কেজির মতো হয়। এগুলোই আমরা বাজারে গিয়ে হয়তো ২০০ টাকায় বিক্রি করবো। কারণ ১৫০ টাকার বাইরে লেবার বিল, গাড়িভাড়া আছে। সুতরাং ২০০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব হয় না। আমি শাজাহানপুরে তরমুজ বিক্রি করি। এখান থেকে নিয়ে সেখানে নিয়ে ফুটপাতে বিক্রি করি।’ চিটাগাং রোডের ভ্রম্যমাণ বিক্রেতা উজ্জল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন তরমুজ বিক্রি করে পোষানো যাচ্ছে না। ৯০ ভাগ মালই সাদা বাইর অয়। অনেক তরমুজ সাদা বের হচ্ছে। এখন দাম বেশি পাওয়ার জন্য পোক্ত না হওয়া মালগুলা কাইটা নিয়ে আসতাছে। সেই জন্য তরমুজ ভালো হইতেছে না। আমি এক সপ্তাহ ধইরা তরমুজ নেই না। কারণ কাস্টমার আইসা আমারে ধরে। কেউ ২০০ টাকা দিয়ে তরমুজ নিয়ে যদি খাইতে না পারে তাহলে আমগো ফের দিতে চায়, তহন আমগো লস হয়। আমি সেই জন্য অন্য মাল নিয়া বেচতাছি।’ রাজধানীর ধোলাইপাড়, খিলগাঁও, রামপুড়া, বাড্ডাসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দামের তারতম্য লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন অভিযানের ভয়ে কেউ কেউ পিস হিসাবে তরমুজ বিক্রি করলেও সার্বিক দামের হিসাবে সেটি অনেকটা কেজি দরে বিক্রির দামের সমানই পড়ছে।
পিস হিসেবে কিনে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করা যাবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেছেন, বিক্রেতারা তরমুজ যেভাবে কিনবেন, সেভাবেই বিক্রি করতে হবে। কেউ পিস হিসেবে কিনলে তা কেজি দরে বিক্রির সুযোগ নেই। যিনি কেজি হিসেবে কিনবেন, তিনি কেজি হিসেবে বিক্রি করবেন। তবে এর সপক্ষে পাকা ভাউচার থাকতে হবে। তা না হলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। যদি কেউ কেজি হিসেবে বিক্রি করেন, তাহলে ভোক্তারা যেন সেটা প্রত্যাহার করেন এবং ভোক্তা অধিদপ্তরকে জানান। ভোক্তা অধিদপ্তর সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
বরিশালের স্বরুপকাঠি থেকে তরমুজ বিক্রি করতে আসা মোহাম্মদ লিটন জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুই/তিনদিন ধইরা বাজারটা নিয়ন্ত্রণে আসছে। আগে বড় তরমুজ বাজারে কম ছিল, সেগুলো এখন আসছে। ব্যাপারীরা মাল আইনা পোষাইতে পারতাছে। অযথা বাইরে বাড়তি দামে তরমুজ বেচতাছে। ৭০-৮০ টাকা দামে তরমুজ বিক্রি করার মানেই হয় না। আমাদের কাছ থেকে যেগুলা কিনবে সেগুলো সব খরচ মিলায়ে ১৫০ টাকা পড়লে সেটা ১৮০ টাকায় বিক্রি করা যেতে পারে। সেটা সর্বোচ্চ ২০০ টাকা হতে পারে। এর বেশি হওয়ার সুযোগ নাই। কিন্তু ৭০-৮০ টাকা কেজি দাম হওয়া উচিত নয়।