পাকিস্তানে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সন্ত্রাসী হামলা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এতে বেসামরিক নাগরিকদের পাশাপাশি নিশানা করা হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদেরও। আর এসব হামলায় বিদেশি অস্ত্র ব্যবহার করছে সন্ত্রাসীরা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অস্ত্র। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান ছাড়ার সময় মার্কিন বাহিনী যেসব অস্ত্র ফেলে গিয়েছিল, সেগুলো ব্যবহার করছে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি), বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মির মতো সংগঠনগুলো।
পাকিস্তান আগেও অভিযোগ করেছিল, আফগানিস্তান থেকে তাড়াহুড়ো করে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে পড়ে। যদিও এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে পেন্টাগন।
তবে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বাজেয়াপ্ত অস্ত্র-সরঞ্জামের বিবরণই ইঙ্গিত করছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানের ভেতরে চালানো হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অস্ত্রই ব্যবহার করেছে সন্ত্রাসীরা।
নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে জিও নিউজ জানিয়েছে, সম্প্রতি তুর্বতে হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীরা একটি এম৩২ মাল্টি-শট গ্রেনেড লঞ্চার এবং এম১৬এ৪ অ্যাসল্ট রাইফেলের মতো মার্কিন অস্ত্রে সজ্জিত ছিল।
গত ২৭ জানুয়ারি উত্তর ওয়াজিরিস্তানে নায়েক মিনাল্লাহ নামে এক সন্ত্রাসীর কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিল। এর আগে, ২২ জানুয়ারি ঝাবের সাম্বাজায় সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত জঙ্গিদের কাছ থেকে একই ধরনের অস্ত্র উদ্ধার করেছিল পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী।
গত ১৯ জানুয়ারি পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে জঙ্গিদের কাছ থেকে জব্দ করা অস্ত্রগুলো ছিল বিদেশে তৈরি।
তার আগে, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর মীর আলীতে সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে গোলাবারুদসহ একে-৪৭ এবং এম৪ কার্বাইন অ্যাসল্ট রাইফেল উদ্ধার করেছিল নিরাপত্তা বাহিনী। একই মাসে (১২ ডিসেম্বর) ডেরা ইসমাইল খানের দারাবন এলাকায় হামলার সময় নাইট ভিশন গগলস এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যবহার করেছিল সন্ত্রাসীরা।
গত ১৩ ডিসেম্বর আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে প্রবেশকারী একটি গাড়ি থেকে অত্যাধুনিক মার্কিন অস্ত্র উদ্ধার করেন কাস্টমস এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। এর দুদিন পরেই উন্নত মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে পাকিস্তানের একটি ট্যাংকে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা।
গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর এবং ৪ নভেম্বর যথাক্রমে চিত্রাল ও মিয়ানওয়ালি বিমানঘাঁটিতে দুটি পাকিস্তানি চেকপোস্টে আক্রমণের জন্য মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করেছিল সন্ত্রাসীরা। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ঝাব গ্যারিসন আক্রমণের সময়ও মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করেছিল টিটিপি সদস্যরা।
ইউরএশিয়ান টাইমসের সূত্রে জিও নিউজের খবরে আরও বলা হয়েছে, টিটিপি সদস্যরা এখনো পাকিস্তানে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করছে। এই তথ্য মোটেও আশ্চর্যজনক নয়। কারণ পেন্টাগন নিজেই নিশ্চিত করেছিল, তারা আফগান বাহিনীকে যে ৪ লাখ ২৭ হাজার ৩০০টি অস্ত্র দিয়েছিল, তার মধ্যে প্রায় তিন লাখ অস্ত্রই আফগানিস্তানে রেখে যাওয়া হয়েছে। দুই দশকের মিশন শেষে ২০২১ সালের আগস্টে অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই আফগানিস্তান ছেড়েছিল মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বাহিনী।