ভারতে পড়ার জন্য আইসিসিআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস) বৃত্তি বেশ জনপ্রিয়। ২০২১ সালে এই বৃত্তির অধীনেই আমি কেরালার সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় কালিকট থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক করি। স্নাতকজীবন অবশ্য শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু আইসিসিআর বৃত্তি পাওয়ার পর মনে হলো সুযোগটা হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।
আইসিসিআর বৃত্তির জন্য শুধু ভালো ফল হলেই হয় না। যোগাযোগের দক্ষতা, ভাষাগত দক্ষতা, লক্ষ্য, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা—এসবও যাচাই করা হয়। আইসিসিআরে আবেদনের সময় সর্বোচ্চ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে। পছন্দের বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করলে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ভাইভাতে বিষয় সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন ছাড়াও ভারতে কেন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, ইত্যাদি জানতে চাওয়া হয়। সফল হলে কিছুদিনের মধ্যেই ইমেইলে চলে আসবে বৃত্তির নিশ্চয়তার খবর। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও আলাদা করে ভাইভা নিতে পারে।
আমি মনে করি, সরকারি বৃত্তির অধীনে ভিনদেশে পড়ার সুযোগ হলে কখনোই সেটা হাতছাড়া করা উচিত নয়, এমনকি সেটা নেপাল বা ভুটান হলেও। কারণ, অন্য একটা দেশে, ভিন্ন একটা পরিবেশে একাডেমিক পড়ালেখার বাইরেও অনেক কিছু শেখা যায়। আমি যেমন কেরালায় পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁদের বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি। আমার সহপাঠীদের অনেকে আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, তুর্কমেনিস্তান, লেসেথো, গায়ানাসহ নানা দেশ থেকে এসেছে। ফলে একটা আন্তর্জাতিক আবহ পেয়েছি। আমরা একেক দিন একেক দেশের রেসিপি চেখে দেখতাম। বিভিন্ন উৎসবে ভিন্ন ভিন্ন দেশ-ভাষা-ধর্মের মানুষ এক হয়ে আড্ডা দিতাম। আমরা একে অপরের সংস্কৃতি সম্পর্কে জেনেছি, বড় একটা নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছি। এসবই তো বড় পাওয়া।
যাঁরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করবেন, আমি বলব এখন থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ের খোঁজখবর নেওয়া শুরু করুন। অনলাইনে আবেদনের নিয়মকানুন দেখে কাগজপত্র তৈরি রাখুন। ইংরেজি ভাষা দক্ষতায় ঘাটতি থাকলে সেটা নিয়ে কাজ করুন। পাশাপাশি সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমের অভিজ্ঞতাও আপনাকে এগিয়ে রাখবে। ফেসবুকে আইসিসিআর বাংলাদেশ নামে একটা গ্রুপ আছে, যেটার মডারেটর আমি। এই গ্রুপে যোগ দিলেও অনেক কিছু জানতে পারবেন।