চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নীলকমল ওছমানীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম এ দূর্নীতির প্রতিবাদ করায় বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এস এম আল মামুন এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারুকুল ইসলাম এর নেতৃত্বে সহকারি শিক্ষক আলী আকবর এবং মাহবুবুর রহমানের ওপর অতর্কিত হামলা করেছে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা।
৩ এপ্রিল বুধবার, সকাল ১১টায় নীলকমল ওছামানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি এস এম আল মামুন সুমন আত্মীয়করণের মাধ্যমে সহকারি প্রধান শিক্ষক, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, জেনারেল ল্যাব এসিস্ট্যান্ট নিয়োগে অনিয়ম করেছেন। এছাড়াও সভাপতির আরেক আত্মীয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারুকুল ইসলামকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য পত্রিকায় গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রথম শ্রেনীর কোন জাতীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়নি। এছাড়া সেদিন হাইমচরে ঐ পত্রিকা আসতে দেয়া হয়নি। আবেদনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও প্রধান শিক্ষক পদে কতটি আবেদন পত্র জমা পড়েছে তা কেউ জানেনি। এমনকি শিক্ষক প্রতিনিধিগন ও জানেনা।
আরও জানা যায়, বিদ্যালয়ে চলমান দূর্নীতি এবং অনিয়ম নিয়ে জেলা প্রশাসক, চাঁদপুর এর নিকট অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিষদ এবং ম্যানেজিং কমিটির একাংশ। অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জনাব মোস্তফা কামাল এর নেতৃত্বে বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। তদন্ত চলাকালে ঘটনাস্থলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নেতৃত্বে হট্টগোলের সৃষ্টি করে বহিরাগতরা। হট্টগোলের একপর্যায়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এসময় হঠাৎ বিনা উস্কানিতে বিদ্যালয়ের সভাপতি এস এম আল মামুন সুমন এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারুকুল ইসলামের নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা উপস্থিত শিক্ষকমণ্ডলীর উপর বর্বরোচিত হামলা চালান।
হামলার স্বীকার ভুক্তভোগী শিক্ষক আলী আকবর বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এস এম আল মামুন সুমন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বিদ্যালয়ে দূর্নীতি, অনিয়মের এবং আত্মীকরনের পর মাধ্যমে নিয়োগ বানিজ্য করে আসছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (সভাপতির ফুফাতো ভাই) বিগত ৩ বছর স্কুলের অভ্যন্তরীণ আয় ব্যায়ের কোন হিসাব নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম করেন। নামমাত্র অর্থ কমিটি গঠন করে কমিটির কাউকে না জানিয়ে স্কুলের টাকা লুটপাট করেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তিনি আমাদেরকে গালিগালাজ এবং হুমকি ধমকি দিয়ে আসছেন। আজ তদন্ত কমিটি স্কুল পরিদর্শনে আসলে আমরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত হই। তখন আমাদেরকে দেখে ক্ষীপ্ত হয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারুকুল ইসলাম আমার মাথায় স্টেলের স্কেল দিয়ে আঘাত করেন।
হামলার স্বীকার আরেক শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, সভাপতি এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দূর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় তারা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আজ বিদ্যালয়ে আসলে দক্ষিন আলগী ইউপি সচিব বিল্লাল হোসেন সোহাগ, উপজেলা ছাত্রলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ কোতোয়াল, মহসিন পাটওয়ারী( কালা মহসিন) আমার উপর অতর্কিত হামলা করেন এবং গলায় ধারালো অস্ত্র দ্বারা আঘাত করেন। আমি এই ঘৃনীত হামলার তীব্র নিন্দা জানাই এবং মাননীয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ডা দীপু মনির কাছে এই নরকীয় হামলার বিচার প্রার্থনা করি।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিষদের সদস্য নাসির হোসেন বলেন, আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করার জন্য এস এম আল মামুন সুমন এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারুকুল ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই অনিয়ম করে আসছে। আমরা প্রাক্তন ছাত্ররা এর প্রতিবাদ করায় আমাদের কন্ঠরোধ করতে আজ পরিকল্পিতভাবে এই হামলা করা হয়। আমরা প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিষদের পক্ষ থেকে মাননীয় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট এর হামলার সুষ্ঠু বিচার দাবি করি এবং আমাদের বিদ্যালয়ের দূর্নীতি বন্ধে সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করার অনুরোধ করি।