বৈশাখের শুরুতেই তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। প্রচণ্ড গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত।দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে গরমের অসহনীয় তীব্রতা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। তাপদাহের কারণে বাড়ছে রোগবালাই, হাসপাতালে তৈরি হচ্ছে রোগীর বাড়তি চাপ।
দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহের তীব্রতা আরও বাড়ার শঙ্কায় তিন দিনের জন্য হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।
চলমান তাপদাহে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় আগামী ২১ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সাতদিন দেশের সব স্কুল-কলেজ-মাদরাসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
গরমের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগবালাই। প্রচণ্ড গরমে যেসব অসুস্থতা দেখা দেয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, ঠাণ্ডা, জ্বর-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, পানিশূন্যতা, হিটস্ট্রোক।
তীব্র গরমের কারণে সব থেকে বেশি ঝুঁকিতে থাকে অসুস্থ, বয়স্ক ও শিশুরা। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে এবং হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোগীর চাপ আগের থেকে বেড়েছে। গরম আরও বাড়লে রোগীর চাপ বাড়বে।
ডায়রিয়া রোগের অন্যতম চিকিৎসা কেন্দ্র মহাখালীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল। এই হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় ৪৫৬ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। শনিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ২৪৮ জন রোগী ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছেন।
আইসিডিডিআরবি বাংলাদেশের হাসপাতাল প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, বর্তমান সময়ে এখন পর্যন্ত আমাদের হাসপাতালে রোগীর চাপ স্বাভাবিক। গত দুই মাস থেকেই গড়ে চার-পাঁচশো রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। আমাদের আইসিডিডিআরবিতে দিনে ৭০০ জনের বেশি রোগী ভর্তি হলে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। গ্রীষ্মের শুরুতে এখনও সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
তিনি আরও বলেন, গরমে ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে, খাবার আগে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে যারা শিশুদের খাওয়ান, যত্ন নেন, তাদের এ বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। বাইরের খোলা খাবার বা শরবত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বর্তমানে প্রচণ্ড গরমে ঠাণ্ডা, কাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়ার রোগী বেশি আসছে। আমাদের হাসপাতালে গরমে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়, এখন কিছুটা রোগী বেড়েছে। এখন নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি।
অপরদিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গরমের কারণে রোগীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। হাসপাতালটির মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আলামীন বলেন, গরমের কারণে রোগীর চাপ অবশ্যই কিছুটা বেড়েছে। খুব বেশি যে রোগীর চাপ তা না, তবে রোগী আসছে। আজকেও কয়েকটা রোগী পেয়েছি, মাথা ব্যথার বা মাথা ঘুরে পরে গেছেন। এ ধরনের রোগী হাসপাতালে আসছেন। তবে এটা হিটস্ট্রোক না। গরম আরও বাড়লে এ ধরনের রোগী আরও বাড়তে পারে।
এদিকে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, গরমের কারণে লুজ মোশন বা ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা এরকম রোগী আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। একজন হিটস্ট্রোকের রোগী পেয়েছি। পানিশূন্যতা, হিটস্ট্রোক, ডায়রিয়া এবং শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি অধ্যাপক তৌফিক আহমেদ পিটু জানান, তাপদাহের কারণে আমাদের হাসপাতালে এখনও তেমনভাবে রোগী আসা শুরু হয়নি। তবে যেভাবে গরম বাড়ছে তাতে হয়তো শীঘ্রই এই জাতীয় রোগী আসা শুরু হবে। এখন আমরা ঠাণ্ডা-জ্বর-কাশি এমন রোগী বেশি পাচ্ছি। হিটস্ট্রোকের কোনো রোগী এখনও পাইনি। তবে তাপমাত্রা এমন থাকলে বা আরও বাড়লে হয়তো এ ধরনের রোগীও পাওয়া যাবে।
চিকিৎসকরা বলছেন, এমন তীব্র গরমে মানুষের সমস্যা হবে এটাই স্বাভাবিক, তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এই গরমেও নিরাপদ থাকা যায়, ভালো থাকা যায়। এ সময় সবাইকে বাইরে বের হলে, রোদে গেলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ছাতা, ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে। প্রচুর পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন ও তরল খাবার খেতে হবে। তেল-মশলাজাতীয় খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। যারা বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতায় ভুগছেন তারা খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলায় বাইরে বের না হওয়াই ভালো।