নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাঁদপুরের উপকূলীয় এলাকার জেলেরা। দুইমাস পর নদীতে নামবেন তারা। পুরোনো নৌকা, ছেঁড়া জাল মেরামতে দিন কাটছে জেলেদের। আগামী ৩০ এপ্রিল রাত ১২টার পর মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা উঠছে।
ষাটোর্ধ্ব জেলে দুদু মিয়া। সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের সাখুয়া গ্রামের এ জেলে ছোটবেলা থেকে মাছ ধরার পেশায় জড়িত। মেঘনায় ইলিশ ধরা নিয়ে রয়েছে তার নানান অভিজ্ঞতা। নিষিদ্ধ সময় ছাড়া বাকি সময়ে মাছ ধরার কাজ করেন তিনি। রোববার (২৮ এপ্রিল) সকালে খালের পাশে কথা হয় দুদু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে মাছ ধরার কাজে জড়িত। এখন পর্যন্ত এ পেশায় আছি। বছরের দুটি সময় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। তখন আমাদের অন্য কাজ করে সংসার চালাতে হয়।
মাছ ধরা শুরুর আগে ঋণ করে বিভিন্নভাবে নৌকা মেরামত ও জাল কিনে নদীতে নামি। তবে ইলিশ পাওয়ার বিষয়টি আল্লাহর ওপর। নদীতে নামলে অনেক সময় ইলিশ পাওয়া যায়, আবার অনেক সময় খালি হাতে ফিরতে হয়। তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞা দিলে আমরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকি। তবে সরকার থেকে যে সহায়তা দেওয়া হয় সেটি দিয়ে সংসার চলে না। যে কারণে অন্য কাজ করে উপার্জন করি। সরকার জাটকা রক্ষায় যে অভিযান চালায় সেটি আরও কঠোর এবং কারেন্ট জালের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা দরকার। তাহলে ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
একই ইউনিয়নের জেলে সাইফুল ইসলাম, সফিক গাজী, মালেক শেখ। তারা নদীতে নামার জন্য জাল ও নৌকা মেরামতের কাজ করছেন। তারা জানান, দুই মাস মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকায় আমাদের সংসার অনেক কষ্টে চলেছে। কারণ আমরা মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোনো কাজ করতে পারি না। যে কারণে ইলিশ পাওয়ার আশা নিয়ে এখন আবার জাল মেরামত করে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তারা আরও বলেন, আমাদের প্রতিটি নৌকায় ১০-১২ জন জেলে থাকে। ১২ জনের ১২ পরিবার। আমাদের মাছ পাওয়ার ওপর নির্ভর করে সংসার। মাছ পাওয়া গেলে সংসার ভাল চলে। না পাওয়া গেলে কষ্ট করেই চলতে হয়। অনেকে সন্তানদের নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করেন।
কান্ট্রি ফিসিং বোর্ড মালিক সমিতি চাঁদপুর জেলার সভাপতি শাহ আলম মল্লিক বলেন, এ বছর মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকা রক্ষায় যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেটি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। মেঘনা নদীর হাইমচর হচ্ছে জাটকা বিচরণের অন্যতম স্থান। সেখানে প্রতিবছর শরীয়তপুর ও মতলব উত্তর উপজেলার ২০০-৩০০ জেলে নৌকা এসে জাটকা নিধনে নামত। কিন্তু এ বছর তাদের প্রতিরোধ করা হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান দুই মাসের জাটকা রক্ষার অভিযান সম্পর্কে বলেন, এ বছর ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় অভয়াশ্রম এলাকায় ১০টি স্পিডবোট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ এ বছর রমজান মাসেও দিনরাতে নদীতে অবস্থান করেছে। রমজান মাসজুড়ে নদীতে ছিল আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বহিরাগত কোনো জেলে এ বছর নদীতে নেমে জাটকা ধরতে পারেনি। তাদের আমরা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এ বছর জেলা টাস্কফোর্সের কঠোর অবস্থান থাকায় জেলেরা নদীতে নেমেছে কম। তারপরেও যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নেমেছে তার মধ্যে প্রায় তিন শতাধিক জেলেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়েছি। দুই মাসে প্রায় ৫০ লাখ মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, তিন মেট্রিক টন জাটকা ও ৬০টি মাছ ধরার নৌকা জব্দ করা হয়েছে। আটক জেলেদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। জব্দকৃত নৌকাগুলো পরবর্তীতে নিলামে বিক্রি করা হবে।