রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সরকারের বেকারত্ব দূরীকরণ প্রকল্প ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচিতে হওয়া দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এ উপলক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার (২ মে) মন্ত্রণালয়ের পাঁচজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না।
তিনি বলেন, ন্যাশনাল সার্ভিসের অনিয়মের বিষয়ে কয়েক দিন আগে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দুটি চিঠি পেয়েছি। এতে তদন্ত করবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার ও যুগ্ম সচিব লিয়াকত আলীসহ পাঁচজন কর্মকর্তা। তারা বৃহস্পতিবার সকালে গঙ্গাচড়া উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসবেন বলে আমাকে অবগত করেছেন।
উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২০১০ সালে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি চালু করে সরকার। কর্মসূচির আওতায় বেকার যুবক ও যুবতীদের তিন মাস প্রশিক্ষণের পর সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুই বছরের জন্য অস্থায়ী চাকরি দেওয়া হয়। এই আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ন্যাশনাল সার্ভিসের চতুর্থ পর্বে গঙ্গাচড়া উপজেলাকে যুক্ত করা হয়।
ইউএনওর কার্যালয় ও বিভিন্ন উপকারভোগী জানান, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচিটিতে তৎকালীন দায়িত্বে থাকা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা খন্দকার এনামুল কবির ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
দুই বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে গঙ্গাচড়া উপজেলায় উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৭ জন। জনপ্রতি প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা করে ২৪ মাসে মোট ভাতার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এই খাতে ব্যয় হওয়ার কথা ছিল ৪৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু উপজেলায় ভাতা বাবদ উত্তোলন করা হয় ৬৬ কোটি ১ লাখ ৮১ হাজার ৬০০ টাকা। এতে ২২ কোটি ১৪ লাখ ১৩ হাজার ৮০০ টাকা অতিরিক্ত উত্তোলন করা হয়।
এরপর কর্মসূচিটি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে সংশ্লিষ্টরা দুটি চালানের মাধ্যমে গঙ্গাচড়া উপজেলা থেকে আত্মসাৎ করা মোট ১৩ কোটি টাকা সরকারকে ফেরত দেন। তবে অফিসের হিসাব অনুযায়ী এখনো ৯ কোটির বেশি টাকার গরমিলের তথ্য পাওয়া যায়। পরে বিষয়টি আমলে নেয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ এপ্রিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সিরাজুর রহমান ভূঞার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদারকে আহ্বায়ক ও যুগ্ম সচিব লিয়াকত আলীকে সদস্যসচিব করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
গঠিত কমিটিকে দেওয়া চিঠিতে ১ থেকে ৪ মে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, গঙ্গাচড়া উপজেলা ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির উপকারভোগীদের প্রকৃত সংখ্যা ৩ হাজার ৪৭ জন।
এদিকে সেবা ব্যাংকের তথ্যমতে, ৩ হাজার ৯৬০ জন উপকারভোগীর নামে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। কিন্তু উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কর্তৃক প্রণীত প্রতিবেদনে ৪ হাজার ১১৯ জন উপকারভোগীর সংখ্যা উল্লেখ করে কল্যাণ ভাতা উত্তোলন করা হয়।