এসএসসির ফলাফলে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য ধরে রেখেছে নরসিংদীর নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল অ্যান্ড হোমস। এ বছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে ২৯৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাসসহ ২৯৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। রোববার (১২ মে) বেলা ১১টায় অনলাইনে এসএসসির ফলাফল ঘোষণার পর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. ইমন হোসেন। প্রতিষ্ঠানটির ধারাবাহিক সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল কাদির মোল্লা ও মিসেস নাছিমা মোল্লা।
এর আগে ২০২৩ সালে শতভাগ পাসসহ ৯৭ দশমিক ১২ শতাংশ জিপিএ-৫ ও ২০২২, ২০১৭ এবং ২০১৫ সালে শতভাগ পাসসহ শতভাগ জিপিএ-৫ পেয়ে দেশসেরা ফলাফল অর্জন করেছিল এই প্রতিষ্ঠানটি।
বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল অ্যান্ড হোমস ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে পিইসি, জেএসসি ও এসএসসিতে টানা শতভাগ পাসসহ ফলাফলের ভিত্তিতে প্রায় প্রতিবছরই বোর্ডে দেশসেরার স্থান দখল করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২৯৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে শতভাগ পাসসহ ২৯৪ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। বাকি একজন শিক্ষার্থী জিপিএ ৪ দশমিক ৯৪ পেয়েছেন।
এর আগে ২০২৩ সালে ২৭৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাসসহ ২৭০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ২০২২ সালে ২৬৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাসসহ ২৬৬ জনই জিপিএ-৫ পেয়েছিল। এ ছাড়া ২০২১ সালে ২৪৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাসসহ ২৩৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ২০২০ সালে ২১৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাসসহ ২০০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ২০১৯ সালে ১৭১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাসসহ ১৬৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ২০১৮ সালে ১৩৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাসসহ ১৩৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল এবং ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ১৬৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে সবাই জিপিএ-৫ পেয়েছিল। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া কারিমা জামান রিনভী জানায়, ‘আমি স্কুলের হোস্টেলে থাকি নাই। কিন্তু কখনো মনে হয়নি আমি বাসায় রয়েছি। সর্বদা বিদ্যালয়ের শিক্ষক, গাইড শিক্ষকসহ সবাই তদারকির মধ্যে রেখেছে। আমার মা ও বাবা অনেক কষ্ট করেছে।
জিপিএ-৫ পাওয়া সাদিয়া নওরীন প্রভা জানায়, এই ফলাফলের জন্য আমাদের বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, সঠিক দিক-নির্দেশনা, নিয়মিত ক্লাস, বিশেষ ক্লাস, গাইড টিচারের মাধ্যমে নিয়মিত হোম ভিজিট, টিউটেরিয়াল ও মাসিক পরীক্ষার কারণেই এই ভাল ফলাফল সম্ভব হয়েছে।’
জিপিএ-৫ পাওয়া আবিদ নূর জানায়, ‘স্যারদের কঠোর নজরদারিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মনে হয়েছে আমার নয় শিক্ষকদের পরীক্ষা। প্রতিটা বিষয়ে যেখানে সমস্যা সেখানেই হাতেকলমে ধরে দিয়েছেন তারা। কৃতজ্ঞতা স্যারদের জন্য।’ নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল অ্যান্ড হোমসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও থার্মেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল কাদির মোল্লা বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বরাবরই দেশসেরা ফলাফল করছে। এবারও প্রায় শতভাগ পাসসহ দেশসেরা ফলাফলের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। সারাদেশের সার্বিক ফলাফল বিশ্লেষণ করলে আশা করছি আমরা দেশসেরা অবস্থানে আছি। মূলত নরসিংদীর মতো মফস্বল শহরে মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের অঙ্গীকার নিয়েই আমি ও আমার সহধর্মীণী নাসিমা বেগম স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আমি সবসময় চেয়েছি সুশিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মানব সম্পদে পরিণত হোক। যাতে আমাদের সমাজে সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত বেকার তৈরি না হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকের এই সাফল্য শুধু এই প্রতিষ্ঠানের একার না। এই সাফল্য পুরো নরসিংদীবাসীর। এরই লক্ষ্যে আমার পরিচালনাধীন মজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশন শুধু আমাদের পরিচালনাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, জেলার প্রায় ৩১৫ টি স্কুল ও কলেজে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করনে সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছি।’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. ইমন হোসেন বলেন, ‘একটি বিদ্যালয়ের ভাল ফলাফলের মূলমন্ত্র হচ্ছে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবদের মধ্যে সমন্বয়। আর আমাদের মূলমন্ত্র হচ্ছে আবদুল কাদির মোল্লা। স্যারের ইনোভেটিভ চিন্তা-চেতনা, সময়োপযোগী সঠিক দিক নির্দেশনায় আমরা এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমাদের এই ফলাফল অব্যাহত আছে।’ উল্লেখ্য, নরসিংদীতে মানসম্মত শিক্ষা দানের অঙ্গীকার নিয়ে ২০০৮ সালে শহরের ভেলানগর এলাকায় থার্মেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল কাদির মোল্লা নরসিংদীতে তার এবং তার স্ত্রী মিসেস নাছিমা বেগমের নামে যৌথভাবে নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল অ্যান্ড হোমস প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে ১৭৩ জন তরুণ ও মেধাবী শিক্ষক-শিক্ষিকার সার্বিক তত্ত্বাবধানে স্কুলটি কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে স্কুলটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার ৬০০ জন।