দেশের অন্যতম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র চাঁদপুর মাছঘাট কেন্দ্রিক এলাকা, নতুন বাজার ও পুরাণ বাজারে এক সময় ৩৩টি বরফকল চালু থাকলেও এখন মাত্র ৫টি বরফকল চলমান। ইলিশসহ দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে বরফ সবচাইতে বেশী ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের পুঁজির অভাব, কাচাঁমালের মূল্য বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যাওয়া এবং মাছের আমদানি কম থাকায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বরফ কলগুলো।
সম্প্রতি শহরের নতুন বাজার ও বাণিজ্যিক এলাকা পুরান বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানাগেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এক সময় এখানে চালু থাকা ৩৩ টির মধ্যে এখন চলছে মাত্র পাঁচটি বরফকল। পর্যাপ্ত বরফের অভাবের কারণে অনেক সময় ইলিশ মাছ ও দেশীয় চাষ করা মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সরবরাহ এবং সংরক্ষণে বিপাকে পড়তে হচ্ছে মৎস্য ব্যবসায়ীদের। বরফ সংকটে কর্মহীন হয়ে পড়েছে বহু শ্রমিক। এ সংকট নিরসনে বন্ধ থাকা কয়েকটি বরফ কল চালুর জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবদেন করেছেন বরফ কল মালিক সমিতি।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বর্তমানে শহরের নতুন বাজার ইলমা শাহরিনসহ তিনটি ও পুরান বাজারে বিসমিল্লাহ্ নামে ২ টি বরফ কল চালু রয়েছে। সমিতির আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি পেলে নতুন বাজারের বড়স্টেশনের জলি ও রিয়াদ বরফকল, পুরান বাজারের পূবালী আইস বরফকল ও যমুনা আইস ফ্যাক্টরি চালু করা সম্ভব হবে।
একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ৭টি বরফকল চালু থাকলে সাড়ে ৪ হাজার ক্যান বরফ উৎপাদন হয়। প্রতি ক্যান বরফ পাইকারি বিক্রি করেন ১৬০ টাকা দরে। উৎপাদিত সাড়ে ৪ হাজার ক্যান বরফ বিক্রি করা হয় ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু বিদ্যুৎ বিলসহ সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ এর সমপর্যায়ে চলে আসে। যে কারণে বরফকলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মাছঘাটের শ্রমিক হোসেন বলেন, আমরা শুধু চাষ করা মাছ বিক্রি করছি। পাশের জেলা শরীয়তপুর থেকে আসা রুই, কাতল, মৃগেলসহ দেশি মাছগুলো এবং খুলনা থেকে আসা চিংড়ি মাছ সংরক্ষণের জন্য বরফ সংকটে প্রতিদিন বেকায়দায় পড়তে হয়। তাই মাছঘাটে অন্তত একটি বরফকল চালু করা প্রয়োজন।
শহরের নতুনবাজার ইলমা শাহরিন বরফকল মালিক মানসুর মাহমুদ জানান, পদ্মা-মেঘনা নদীতে প্রচুর পরিমাণে বালু উত্তোলনের কারণে মাছের ডিম বিনষ্ট হওয়ায় এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় আগেরমত ইলিশ ও দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় না। তাই ভরা মৌসুমেও মাছের সংকট দেখা দেয়। এতে করেও বরফের চাহিদা কম থাকা, বিদ্্ুযৎ বিল বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারনে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বরফকলগুলো। তবে চাঁদপুরে বরফ কল বন্ধ হলেও মালিকদের কেউ কেউ মাছের উৎপাদন সাপেক্ষে বরফ আমদানি করেন।
প্রবীণ বরফকল ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম জানান, প্রচুর পরিমাণ মাছ থাকলে সমস্যা নেই। যখন মাছ কম থাকে তখন আমাদের লোকসান গুনতে হয়। তবে শীতকালে আমরা পুরো মৌসুম লোকসান দিয়ে থাকি। তখন বরফের চাহিদা কম থাকে দীর্ঘ পাঁচ মাস পর্যন্ত। এ পাঁচ মাসের পুরোটাই লোকসান গুনতে হয়। বরফকলগুলো বন্ধ হওয়ার পেছনে এটি অন্যতম একটি কারণ।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, ইলিশ বিক্রি ও সংরক্ষণ এবং চাষের দেশীয় মাছের বাজার ধরে রাখতে আরও কয়েকটি বরফ কল চালু করা প্রয়োজন। বরফ না থাকায় পাইকাররাও এখানে চাষের মাছ কিনতে আসছে না। যে কারণে এখানে বহু শ্রমিক অভাব-অনটনে অলস সময় কাটায়। তাই আরো কয়েকটি বরফ কল চালুর প্রয়োজনীয়তার উদ্যোগ নিতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।