কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছেন না। অপরদিকে ভোক্তারা বেশি দামে পণ্য ক্রয় করছে, মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফা করছে, তাদের দৌরাত্ম কমাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
বৃহস্পতিবার (৩০মে) ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে “স্মার্ট এগ্রিকালচার; ভ্যালু চেইন উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশরাফ আহমেদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিনসহ বিশিষ্টজনরা।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আমদানি-রপ্তানিকারকদের সুবিধার্থে খুব শিগগিরই ঢাকা চেম্বারের একটি পূর্ণাঙ্গ হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হবে। যেখান থেকে ‘আইআরসি’ এবং ‘ইআরসি’ সার্টিফিকেট প্রাপ্তির সব সুবিধা প্রদান করা হবে। এ বছরের শেষ নাগাদ ‘যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি)’-এর সেবার সকল কার্যক্রম পেপারলেস করা হবে। এতে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি হ্রাস পাবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট এগ্রিকালচারের কোনো বিকল্প নেই এবং পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কার্যকর ভ্যালু চেইনের গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছেন না, অপরদিকে ভোক্তারা বেশি দামে পণ্য ক্রয় করছে, মধ্যস্বত্তভোগীরা মুনাফা করছে, তাদের দৌরাত্ম কমাতে হবে। দেশের কোন জায়গায় তুলনামূলক কম মূল্যে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরনের তথ্য প্রাপ্তির একটি প্ল্যাটফর্ম প্রণয়নের জন্য তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের প্রতি আহ্বান জানাই।
তিনি বলেন, কৃষকদের ব্যবহার উপযোগী তথ্য কাঠামো প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই। নতুন প্রণীত ‘লজিস্টিক পলিসি ২০২৪’- তে ভ্যালু চেইন সহ অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যান্য বিষয়গুলোর সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয় অবগত হওয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানাই।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি মো. সামসুল আরেফিন বলেন, দেশের কৃষকদের ব্যবহার উপযোগী করে এ খাতের তথ্য-প্রযুক্তি তৈরি করা ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের তরুণ সমাজ সাম্প্রতিক সময়ে কৃষি খাতের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে, যেটা অনেক উৎসাহব্যঞ্জক একটি বিষয়। কৃষির উৎপাদিত পণ্য পুনরায় ব্যবহারে ওপর মনোযোগী হতে হবে। এছাড়াও কৃষি ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, কৃষি খাতে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যের উৎপাদনশীলতা ২০-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা যায়। সেই সঙ্গে এ খাতে ব্যয় ২০ শতাংশ হ্রাসের পাশাপাশি কৃষকের আয় ৩০-৪০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব। বর্তমানে এ খাতে সাপ্লাইচেইনের অপর্যাপ্ততা, বাজারে পণ্য প্রবেশাধিকারের সুযোগ না থাকা এবং উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজন প্রভৃতি সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিদ্যমান অবস্থা উত্তরণে কৃষি যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন ও কৃষকদের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ানো, কৃষি গবেষণা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, প্রয়োজনীয় সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন এবং কার্যকর ভ্যালু চেইন ব্যবস্থার প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
সেমিনারে আইফার্মার-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহাদ ইফাজ ‘এগ্রো ভ্যালু চেইনে ফ্রন্টিয়ার টেক অটোমেশনের সম্ভাবনা’ এবং সুইসকন্টাক-এর সিনিয়র ম্যানেজার (প্রোগ্রাম) মোহাম্মদ সাকিব খালেদ ‘স্মার্ট এগ্রিকালচার : ইস্যুস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জস ইন ভ্যালুচেইন ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ক দুটো মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ফাহাদ ইফাজ বলেন, কৃষি খাতে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলোজির ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যের বাজারের অভিগম্যতা বাড়ানো, উৎপাদন ব্যয় হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
তিনি জানান, ‘ম্যাকেনজি অ্যান্ড কোম্পানি’র তথ্য মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জিডিপিতে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলোজির অবদান থাকবে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, তাই এ খাতের উন্নয়নে নীতি সহায়তা এবং একটি কার্যকর ইকোসিস্টেম একান্ত আবশ্যক।
মোহাম্মদ সাকিব খালেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি দেশের কৃষি খাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে, যা মোকাবিলায় আমাদের আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। লাইভস্টক খাতে স্থানীয় বিনিয়োগ বেড়েছে এবং আশা করা যায় আগামী ১০ বছরে এটি দ্বিগুণ হবে। কার্যকর সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, পণ্য আহরণ পরবর্তী ক্ষতি হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়ানো এবং প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা বাড়াতে হবে।