চাঁদপুর সদর উপজেলায রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন এলাকায় নদী থেকে যত্রতত্র অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ করে ইউনিয়নকে বাঁচাতে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হযরত আলী বেপারীর উদ্যোগে ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন নদী বেষ্টিত রাজরাজস্বর ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগন। মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সম্মুখে ও ভাঙনকবলিত নদীর তীরে হাজার হাজার নারী-পুরুষ মানববন্ধন করেন।
জানাযায় , চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে শত শত ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের শিকার হচ্ছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। ভাঙনরোধে সরকার শত শত কোটি টাকা ব্যয় করলেও ভাঙন পুরোপুরি থামানো যায়নি। উপরন্তু বালু বিক্রি করে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি মহল। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে শুধু ভাঙনই নয়, এ অঞ্চলে ইলিশ কম আসছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর জীববৈচিত্র্য। এ অবস্থায় নদীতে অপরিকল্পিত ড্রেজিং বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভাঙনকবলিতরা।
নদী ভাঙ্গনের শিকার হওয়া মানুষ বলেন, আমরা বাড়ী-ঘর লইয়া কয়েকবার ভাঙ্গনের কবলে পড়ছি। ‘নদী থেকে বালু কাইট্টা নেওনের কারণে আমাগো বাড়ি, ঘর, জমি নদীতে চলে যাচ্ছে। আমরা পথের ভিখারি হয়ে গেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, আমাগোরে একটু সহযোগিতা করেন। নদী ভাইঙা আমাগোরে শেষ কইরা দিছে। আমরা কই যামু? আমরা কই গিয়া বাড়িঘর করমু? আমাগো থাকোনের জায়গা নাই। একটু ড্রেজারগুলো বন্ধ করেন।’
সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বরের ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, এই রাজরাজেশ্বর বিভিন্ন এলাকা কয়েকবারই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আমি অন্তত ১২ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। ঘরবাড়ির পাশাপাশি চাষাবাদের জমিও বিলীন হচ্ছে। নদী খননের নামে ড্রেজিং করে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নটাকে পুরোপুরি বিলীনের পাঁয়তারা করছে একটি চক্র। প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ, আমাদেরকে এই বালুখোরদের হাত থেকে রক্ষা করুন। যদি এভাবে বালু কাটা অব্যাহত থাকে তাহলে একদিন আমরা নিঃস্ব হয়ে যাবো। পূর্বপুরুষের ভিটামাটি সব হারাবো। চাঁদুপুরে পদ্মা-মেঘনার সম্পদ, নদীভাঙন রোধ ও ইলিশ রক্ষায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। গত ২ মার্চ ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (খাস জমি) জহুরুল হককে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
১৯ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বালু উত্তোলনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। সভায় জেলা নদী রক্ষা কমিটির ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সেলিম খান নামে এক ব্যক্তি আদালতে মামলা করে ২০১৫ সাল থেকে বালু তুলছেন। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাইকোর্ট থেকে বালুকাটা বন্ধের নিচে থাকা অর্পণ করলেও কয়দিন পরপর তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে।
বালুকাটা বন্ধে সকলকে এগিয়ে আশা প্রয়োজন আর না হলে নদী ভাঙ্গন থেকে কোন অবস্থাতে রক্ষা পাবে না মানুষ।