চট্টগ্রামের একটি স্কুলের দুই শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও পাস করেছেন। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এ তথ্য জানাজানি হয়। নজরবিহীন এ ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। একটি বিষয়ের পরীক্ষায় অনুপস্থিত থেকে কীভাবে তারা পাস করলো, তা নিয়ে শিক্ষাবোর্ডের কর্তারাও রীতিমতো ‘থ’ হয়ে যায়। এরপর তদন্তে নামে শিক্ষাবোর্ড। কিন্তু আজ পুনঃনিরীক্ষণের ফলে এই দুই শিক্ষার্থীকে ফেল দেখানো হয়েছে।
চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই পরীক্ষার্থী এক বিষয়ে লিখিত পরীক্ষা না দিয়েও পাস করেছে। সেই দুই শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণে তাদের ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে এই ফল প্রকাশ করা হয়।
এর আগে ৮ জুন পরীক্ষা না দিয়েও পেলেন জিপিএ-৫, এমন সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।জানা যায়, এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে নৈর্ব্যক্তিক ও ব্যাবহারিকে ২৫ নম্বর করে মোট ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই বিষয়ের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা ছিল। ৩০ মিনিটের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় কেন্দ্রেই উপস্থিত হননি দুই শিক্ষার্থী। পরীক্ষা ছিল না মনে করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরীক্ষায় অংশ নেননি এই দুই পরীক্ষার্থী। পরে তারা তাড়াহুড়ো করে কেন্দ্রে পৌঁছালে দেখতে পান নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা শেষ করে পরীক্ষার্থীরা বের হয়ে যাচ্ছেন। অথচ ১২ মে প্রকাশিত এসএসসির ফলাফলে দেখানো হয়, তারা দুজন আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষায় জিপিএ ৩ দশমিক ৫ পেয়েছেন। সাদিয়া সোলতানা ও উর্মি আক্তার নামের এই দুজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে কীভাবে পাস করলেন, সেটা নিয়ে উপজেলাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
শিক্ষাবোর্ডের কর্তারা বলছেন, ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় দুজনকেই তাদের ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র (বাঁশখালী-১) থেকে নম্বরপত্র পাঠানো হয়। একইভাবে অনুপস্থিত দুই শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র জমা না হওয়া সত্ত্বেও তত্ত্বীয় (নৈর্ব্যক্তিক) পরীক্ষায়ও সর্বোচ্চ নম্বর দিয়ে তাদের ৩.৫ পাইয়ে দেন বোর্ড পরীক্ষকরা।
এ বিষয়ে বাঁশখালী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব রতন চক্রবর্তী শিক্ষাবোর্ডকে জানিয়েছেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষার দিন ওই দুই শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। তারা সেদিন কেন্দ্রেও আসেননি। আমরা দুই শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতির তথ্য পরীক্ষার দিনই বোর্ডে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া ওই দুই শিক্ষার্থী কীভাবে ৩.৫ পেল তা বুঝতে পারছি না।
এদিকে আজ মঙ্গলবার অনলাইনে দেখা যায়, চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই দুই শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। ফলে শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে দুই শিক্ষার্থী ফেল দেখানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এএমএম মুজিবুর রহমান বলেন, বোর্ডে পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত করার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের একটা ভুলের কারণে এটা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত করতে গেলে তো ভুল-ত্রুটি থাকে। এই বিষয়টি আমাদের শৃঙ্খলা কমিটিতে উঠবে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর রেজাউল করিম বলেন, ফল তৈরিতে কিছু ছোট ভুল ক্রটি হয়, তবে এ ধরনের ভুল খুবই মারাত্মক। এটা অমার্জনীয় কাজ। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে বোর্ডের অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১ অনুযায়ী বোর্ড নিজে ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে ফৌজদারি ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে।