টানা আট মাসেরও বেশি সময় ধরের ফিলিস্তিনে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এতে করে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়েছে।
এরসঙ্গে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। পরিস্থিতি এতোটাই অমানবিক যে, গাজার উল্লেখযোগ্য অংশ ‘দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির’ সম্মুখীন হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
এমনকি গাজার হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে। মূলত ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই অঞ্চলে খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং জ্বালানি সরবরাহ কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল।
ডব্লিউএইচও’র প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘গাজার জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখন বিপর্যয়কর ক্ষুধা এবং দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। খাদ্য সরবরাহ বৃদ্ধির প্রতিবেদন সত্ত্বেও, বর্তমানে এমন কোনও প্রমাণ নেই যে, যাদের এটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার পাচ্ছেন।’
টেড্রোস আরও বলেন, গাজায় পাঁচ বছরের কম বয়সী ৮ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত বলে শনাক্ত ও চিকিৎসা করা হয়েছে। তবে, নিরাপত্তাহীনতা এবং সহায়তা প্রবেশের অভাবের কারণে গুরুতর অপুষ্টিতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য শুধুমাত্র দুটি স্থিতিশীলকরণ কেন্দ্র পরিচালনা করা যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রধান বলেন, অবরুদ্ধ এই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অপুষ্টির কারণে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েল টানা আট মাসেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায় গাজায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ইসরায়েলকে ‘গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মৌলিক পরিষেবা এবং প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করার’ নির্দেশ দিয়েছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের কিছু ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও গাজায় আরও সাহায্য প্রবেশ করার সুযোগ দিতে এবং সেগুলো অভাবী মানুষের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
অবশ্য গত মাসে গাজা এবং মিসরের মধ্যে অবস্থিত রাফা ক্রসিংয়ের ফিলিস্তিনি অংশ দখল করে বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। এটি সাহায্য এবং মানবিক কর্মীদের গাজায় প্রবেশের প্রধান প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করত।
এছাড়া গত মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর করিম খান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির অনুরোধ করেন।
জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি স্বাধীন কমিশনও ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখার জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছে।