বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে ভ্রমণে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের প্রত্যাখ্যাত ভিসা আবেদনের ফি থেকে গত বছর ১৩ কোটি ইউরো আয় হয়েছে। ইইউভুক্ত দেশগুলোর এই আয় আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম ইইউ অবজারভারের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
দুই বেসরকারি সংস্থা লাগো কালেক্টিভ ও ওথো মান্তেগাজ্জা থেকে পাওয়া পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ইইউ অবজারভার। ভিসা ফি থেকে পাওয়া এই আয়কে ‘উল্টো-রেমিট্যান্স’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রত্যাখাত শেনজেন ভিসা ফি থেকে পাওয়া এই আয়ের ৯০ শতাংশ এসেছে আফ্রিকা এবং এশিয়ার দেশগুলো থেকে। ২০২২ সালে একই খাত থেকে আয় ছিল ১০ কোটি ৫০ লাখ ইউরো।
২০২৪ সালে এই আয় আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ চলতি মাসের ১১ জুন থেকে ইইউ ভ্রমণে আসতে ইচ্ছুক প্রাপ্তবয়স্কদের ভিসা আবেদন ফি ৮০ ইউরো থেকে বাড়িয়ে ৯০ ইউরো করেছে ইউরোপীয় কমিশন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে প্রতিবেশী যুক্তরাজ্য প্রত্যাখ্যাত ভিসা ফি থেকে গত বছর সর্বমোট আয় করেছে চার কোটি চার লাখ পাউন্ড।
তবে এটি শুধুমাত্র ব্যবসায়িক বা ভ্রমণের উদ্দেশে আসতে চাওয়া মানুষদের দূতাবাসে জমা দেওয়া ফির হিসাব। এতে আবেদনকারীদের ফাইল গুছাতে এবং বিভিন্ন এজেন্সিকে দেওয়া খরচের হিসেব উল্লেখ করা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে স্বল্পমেয়াদী ভিজিট বা ভ্রমণ ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার নিম্ন এবং মধ্যম-আয়ের দেশগুলোতে বেশি। আফ্রিকান দেশগুলো বিশেষ করে, ঘানা, সেনেগাল এবং নাইজেরিয়ায় প্রত্যাখ্যানের হার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। ২০২৩ সালে ইইউতে সবচেয়ে বেশি ভিসার আবেদন এসেছে মাগরেব অঞ্চলের দুই দেশ মরক্কো এবং আলজেরিয়া থেকে।
লাগো কালেকটিভের প্রতিষ্ঠাতা এবং ওডিআই থিঙ্কট্যাঙ্কের সিনিয়র ভিজিটিং ফেলো মার্তা ফরেস্টি ইইউ অবজারভারকে বলেন, ভিসা বৈষম্যের খুব স্পষ্ট পরিণতি রয়েছে এবং বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্রদের এটিতে মূল্য দিতে হয়।
তিনি বলেন, আপনি প্রত্যাখ্যান হওয়া ভিসার খরচকে ‘উল্টো রেমিট্যান্স’ হিসাবে ভাবতে পারেন। যার অর্থ দরিদ্র দেশগুলো থেকে ধনী দেশগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহিত হয়। আর্থিক সাহায্য বা অভিবাসন নিয়ে আলোচনা করার সময় আমরা কখনও এই খরচ সম্পর্কে শুনি না। এটি নিয়ে চিন্তাধারা পরিবর্তন করার সময় এসেছে।
অপরদিকে, ইইউয়ের মতে, ব্লকের ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রে সমস্ত অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রায় অর্ধেকই তাদের ভিসা ওভার স্টে বা মেয়াদ শেষেও থেকে যান। গত বছর ৮৩ হাজারেরও বেশি লোককে ইইউয়ের বাইরের দেশগুলোতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ইইউ কমিশনের মতে, ২০২৩ সালে অনিয়মিতদের ফেরত পাঠানোর হার ১৯ শতাংশ।
২০১৯ সালে থেকে ইউরোপীয় ভিসা কোডের ২৫এ অনুচ্ছেদকে ব্যবহার করে ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা শুরু করেছে। এটি এমন একটি বিধান যার মাধ্যমে অনিয়মিত অভিবাসীদের ফেরত নিতে না চাওয়া দেশগুলোর ওপর ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হয়।
চলতি বছরের এপ্রিলে ইথিওপিয়ার ওপর এমন ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে সম্মত হয়েছে ইইউ কাউন্সিল। যার অর্থ ইথিওপিয়ার কূটনৈতিক এবং সরকারি পাসপোর্টধারীরা আর ভিসা ফি থেকে ছাড় পাবেন না এবং নানা বাঁধার সম্মুখীন হবেন। এছাড়া ইথিওপিয়ার নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় ১৫ দিন থেকে বাড়িয়ে ৪৫ দিন করা হয়।
এছাড়া অনিয়মিতদের ফেরত পাঠানো নিয়ে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশকে এমন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ইইউ-বাংলাদেশ সই করা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি) চুক্তির মধ্যেও এটি উল্লেখ করা হয়।
২০২১ সালে গাম্বিয়ার বিরুদ্ধেও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে চলতি বছরের এপ্রিলে সেটি তুলে নেওয়া হয়। ২০২২ সালে ইইউ থেকে অনিয়মিত গাম্বিয়ান নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর হার ১৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল।