মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ রাখাইনের রাজধানী সিত্তে সংলগ্ন ও আশপাশের এলাকাগুলোতে বসবসাকারী লোকজনদের নিজ বাড়িঘর ছেড়ে রাজধানী বা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ক্ষমতাসীন জান্তা। গতকাল এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সিত্তে এবং তার আশপাশের এলাকাগুলোর বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাজধানীর সংলগ্ন ১৫টি গ্রামের বাসিন্দাদের রাজধানীতে প্রবেশ করতে বা অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে জান্তা প্রশাসন। এলাকা ত্যাগের জন্য তাদের ৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
গত নভেম্বর থেকে রাখাইনের বিভিন্ন এলাকায় জান্তা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ চলছে জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ)। অধিকাংশ সংঘাতে জয়ী হওয়া আরাকান আর্মি গত কয়েক দশক ধরে রাখাইনের স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।
রাখাইনের যেসব এলাকায় জয়ী হয়েছে আরাকান আর্মি, সেসব অঞ্চল থেকে জান্তা বাহিনী ও জান্তা নেতৃত্বাধীন প্রশাসনকে হটিয়ে দিয়েছে গোষ্ঠীটি। সম্প্রতি রাজধানী সিত্তে দখলেরও ঘোষণা দিয়েছে এএ।
সিত্তেতে মিয়ারমার-ভারত যৌথ মালিকানার একটি গভীর সমুদ্রবন্দর রয়েছে। শহরটিতে বসবাস করেন প্রায় ২ লাখ মানুষ।
যে ১৫টি গ্রামের লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেসব গ্রামে বসবাস করেন প্রায় ৪ হাজার মানুষ। একজন বাসিন্দা এএফপিকে বলেন, ‘প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, ৫ দিন পরেও যদি গ্রামগুলোতে লোকজন দেখা যায়, তাহলে সরাসরি গুলি করা হবে।’
এ ব্যাপারে জান্তার এক মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, ‘জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এই ঘোষণা দিয়েছে সরকার।’
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে সেনা বাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। মিয়ানমারের বর্তমান সামরিক সরকারের প্রধানও তিনি।
জান্তা ক্ষমতা দখলের পরপরই বিক্ষোভ শুরু হয় মিয়ানমারে। ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে সেই বিক্ষোভের নেতৃত্বে আসে জান্তাবিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী। ২০২৩ সালে নভেম্বর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জান্তার বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে যুদ্ধে নামে গোষ্ঠীগুলো। সেই যুদ্ধ এখনও চলছে এবং ইতোমধ্যে দেশের এক পঞ্চমাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা।