হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে চলেছে ইরানে। আগামী ২৮ জুন নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন দেশটির ভোটাররা। সেখানে এবার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই করছেন ছয়জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে যেমন পার্লামেন্ট স্পিকারের মতো সুপরিচিত মুখ রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন অল্প পরিচিত প্রার্থীও।
আমির হোসেন গাজীজাদেহ হাশেমী
ইব্রাহিম রাইসির সরকারে প্রভাবশালী ভাইস-প্রেসিডেন্টদের একজন ছিলেন গাজিজাদেহ। ৫৩ বছর বয়সী এ নেতা শহীদ এবং ভেটেরান বিষয়ক ফাউন্ডেশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন, কিন্তু ১০ লাখের কম ভোট পেয়ে সবার পেছনে পড়েন। গাজীজাদেহ এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় দেশকে রাইসির নীতি অনুসরণ করে চালাতে অনুরোধ জানিয়েছেন এবং জোর দিয়ে বলছেন, ইরানের সফল হওয়ার জন্য বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই।
মাসুদ পেজেশকিয়ান
৬৯ বছর বয়সী এ নেতা পেশায় হার্ট সার্জন। ইরানে এবারের নির্বাচনে লড়াই করা কট্টরপন্থি নেতাদের মধ্যে একমাত্র সংস্কারবাদী প্রার্থী তিনি। পেজেশকিয়ান বলেছেন, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির কিছু সংস্করণ ফের চালু করার জন্য পশ্চিমের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান তিনি। অর্থনৈতিক চুক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এ নেতা বলছেন, ইরানকে অবশ্যই বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। ইরানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ তাকে সমর্থন করেছেন। তবু নির্বাচনে পেজেশকিয়ানের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মোস্তফা পৌরমোহাম্মদী
৬৪ বছর বয়সী পৌরমোহাম্মাদী একমাত্র শিয়া নেতা হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের অধীনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরে রুহানির অধীনে বিচারমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৮ সালে তেহরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে কয়েক হাজার রাজনৈতিক বন্দির গণ-ফাঁসিতে ভূমিকা রাখায় পৌরমোহাম্মাদীকে ‘কুখ্যাত মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী’ হিসেবে উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। পৌরমোহাম্মদী জোর দিয়ে বলছেন, ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই বিশ্বের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানের রাশিয়াকে সাহায্য করার সমালোচনা করেছেন তিনি। যদিও এর কারণ বেসামরিক ইউক্রেনীয়দের হত্যা করা নয়। তিনি মনে করেন, তেহরান তার সমর্থনের বিনিময়ে মস্কোর কাছ থেকে যথেষ্ট পাচ্ছে না।
আলীরেজা জাকানি
তেহরানের বর্তমান মেয়র জাকানিও ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাইসির সমর্থনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছিলেন। জাকানি বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, ইরান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার প্রভাবকে উপেক্ষা করতে পারে, তবু এর একটি কূটনৈতিক সমাধান হওয়া উচিত। তিনি একজন কট্টরপন্থি নেতা, যিনি ইরানের বৈদেশিক বাণিজ্যে প্রধান মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলারের ব্যবহার বন্ধ করতে চান। জাকানি প্রেসিডেন্ট হলে নারী এবং বৃদ্ধদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, দরিদ্রদের নগদ অর্থপ্রদান এবং ইরানি মুদ্রা রিয়ালকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে, তিনি কীভাবে এই লক্ষ্যগুলো পূরণ করবেন, সে সম্পর্কে বিশদ কোনো বিবরণ দেননি।
সাঈদ জলিলী
৫৮ বছর বয়সী জলিলী একজন কট্টর রাজনীতিবিদ এবং সাবেক জ্যেষ্ঠ পরমাণু আলোচক। তিনি ২০১৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়েছিলেন এবং ২০২১ সালে রাইসির সমর্থনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছিলেন। ১৯৮০র দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধে একটি পা হারানোর পর তিনি ‘জীবন্ত শহীদ’ ডাকনাম পান। জলিলী মনে করেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন নেই। তার সঙ্গে ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তবু জলিলীকে নির্বাচনের সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না। তিনি মূলত গ্রামীণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন।
মোহাম্মদ বাগের কালিবাফ
ইরানি পার্লামেন্টের স্পিকার কালিবাফই হলেন সর্বোচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, যিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়ছেন। তিনি তেহরানের সাবেক মেয়র। দেশটির আধাসামরিক বাহিনী বিপ্লবী গার্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে তার। কালিবাফের দাবি, বর্তমান সংকট থেকে তিনিই ইরানকে বাঁচাতে পারেন। ৬২ বছর বয়সী এ নেতা মধ্যবিত্তদের দিকে মনোনিবেশ করার পাশাপাশি দরিদ্রদের জন্য আরও নগদ অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে কালিবাফ এগিয়ে রয়েছেন, দ্বিতীয়স্থানে রয়েছেন জলিলী।