বিষধর সাপের দংশনে রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দেশের কোনো ওষুধ কোম্পানিতে উৎপাদন হয় না। বছরের পর বছর ধরে প্রতিবেশী বেশ ভারত থেকে এ ইনজেকশন আমদানি করে ব্যবহার করা হচ্ছে।
২০১৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাপে কাটাকে অবহেলিত স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ঘোষণা দেয়। ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বের সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশকে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানায়।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীনে পরিচালিত একটি প্রকল্পের আওতায় ছয় বছর আগে ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে অ্যান্টিভেনম রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়।
দেশের প্রথম ভেনম রিসার্চ সেন্টারটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ছয় বছরে কতটুকু অগ্রগতি হলো, কী কী সীমাবদ্ধতা রয়েছে, ভবিষ্যতে কী করা দরকার- এসব বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ভেনম রিসার্চ সেন্টার, বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও গবেষক এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাগো নিজের প্ল্যানিং এডিটর মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল।
প্রশ্ন: অ্যান্টিভেনম রিসার্চ সেন্টার, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট জানতে চাই?
উত্তর: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাপে কাটা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর বিশ্বে ৫৪ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয় এবং ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যায়। দক্ষিণ এশিয়ায় মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনসিডিসি) অধীনে ২০২২ সালে পরিচালিত সবশেষ এক জরিপ অনুযায়ী, প্রতিবছর দেশে প্রায় ৪ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হন। এর মধ্যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে মারা যান সাড়ে ৭ হাজার মানুষ। অনেকে বেঁচে গেলেও পঙ্গুত্ববরণসহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় ভোগেন।
প্রতিবছর দেশে প্রায় ৪ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হন। এর মধ্যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে মারা যান সাড়ে ৭ হাজার মানুষ। অনেকে বেঁচে গেলেও পঙ্গুত্ববরণসহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় ভোগেন।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আর্থিক সহায়তায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ২০১৮ সালে দেশের প্রথম এবং একমাত্র সাপ ও সাপের বিষ নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভেনম রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়।প্রশ্ন: প্রধানত কী উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জনে এ রিসার্চ সেন্টারটি প্রতিষ্ঠিত হয়?উত্তর: দেশের সব পরিবেশ ও জলবায়ুবেষ্টিত অঞ্চল থেকে সাপ সংগ্রহ, দীর্ঘস্থায়ী বিষধর সাপ লালন-পালন ও তাদের খাবার (ইঁদুর) উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি, আদর্শ বৈজ্ঞানিক ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রতিনিধিত্বকারী বিষ সংগ্রহ, আমদানি করা অ্যান্টিভেনমের এদেশীয় সাপের বিষের নিষ্ক্রিয়তার হার ও কার্যকারিতা যাচাই এবং সংগ্রহ করা বিষের বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করে অধিকতর কার্যকর, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ অ্যান্টিভেনম তৈরির জন্য এ রিসার্চ সেন্টারটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে কত ধরনের বিষধর সাপ রয়েছে? সেসব সাপের সবগুলোর ভেনমই সংগ্রহ করা হয়েছে?
উত্তর: বাংলাদেশে মোট ১০ প্রজাতির বিষধর সাপ রয়েছে। তাদের মধ্যে দুই প্রজাতির কোবরা, দুই প্রজাতির গ্রিনপিট, পাঁচ প্রজাতির ক্রেইট এবং রাসেল ভাইপার। এসব বিষধর সাপের সবগুলোরই ভেনম সংগ্রহে রয়েছে এই সেন্টারের। এগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এছাড়া দেশের কোন এলাকায় কোন সাপ রয়েছে তা নির্ণয় করা হয়েছে ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে।
প্রশ্ন: রিসার্চ সেন্টারটির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অগ্রগতি কতটুকু?
উত্তর: ছয় বছর আগে যখন সেন্টারটি যাত্রা শুরু করে তখন সাপের সংখ্যা ছিল মাত্র চারটি। বর্তমানে ভেনম রিসার্চ সেন্টারে সাড়ে তিন শতাধিক সাপ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেন্টারটিতে সবগুলোর মেডিকেল চেকআপ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যপরীক্ষা, স্টুল পরীক্ষা ও তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ ভেনম সংগ্রহ করা হয়েছে।
রাসেলস ভাইপারের ভেনম নিয়ে একটি গবেষণা চলমান। এ সাপের ভেনমের বিপরীতে এন্টিবডি তৈরি করে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। যে কোনো অ্যান্টিভেনম তৈরির আগে ধাপে ধাপে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন হয়।
ভেনম রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠার সময় থেকে বাংলাদেশ বন বিভাগের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও বৈজ্ঞানিক কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমা থেকে বিষধর সাপ সংগ্রহ, লালন-পালন, বিষ সংগ্রহ ও বিষ সম্পর্কিত নানাবিধ গবেষণা করে আসছে।