শিশু-কিশোর ও তরুণদের খেলাধুলার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের ৪৯০টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ১২৫টির কাজ শেষ হয়েছে। খুব শিগগিরই বাকি উপজেলাগুলোতে স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু হবে। তারই ধারাবাহিকতায় চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় স্টেডিয়াম নির্মাণে জমি অধিগ্রহণের পূর্বেই ষড়যন্ত্রকারীদের বাঁধার মুখে পড়েছে প্রকল্পটি। জানা যায়, একটি গোষ্ঠীর প্ররোচনায় প্রস্তাবিত জমিকে উর্বর কৃষি জমি আখ্যা দিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে কৃষকদের একাংশ।
এ ব্যাপারে কৃষক ফজল আহমেদ বলেন, এই জমিতে ভালো ফলন হয়না। জমিতে চাষ করলে যে টাকা ব্যয় হয়, সেই পরিমাণ টাকার ফলন ঘরে তোলা যায় না। এক কথায়, লস প্রজেক্ট। এখানে যদি স্টেডিয়াম হয় পুরো হাইমচর থেকে মানুষ এখানে আসবে, খেলাধুলা করবে। এই এলাকার চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে। মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সরকার যদি এই জমির বর্তমান মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য দেয়, আমরা উপকৃত হবো।
স্থানীয়রা বলেন, এই জমি এতটা উর্বর নয়। এখানে যেই ফসল উৎপাদন হয় তা দিয়ে হাতেগনা কয়েকজন মানুষের চাহিদা পূরণ হলেও স্টেডিয়াম হলে উপকৃত হবে পুরো হাইমচরের মানুষ। তাছাড়া এই জমিতে স্টেডিয়াম হলে কৃষকদের ক্ষতির চেয়ে লাভই বেশি হবে।
এ ব্যাপারে হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী বলেন, মিনি স্টেডিয়াম তৈরীতে খুব বেশি জমির প্রয়োজন হবেনা। ‘কিছু মানুষের আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতি মনে হলেও সামগ্রিক দিক বিবেচনা করলে তারাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে। স্টেডিয়াম হলে হাইমচরের আড়াই লাখ মানুষের উপকার হবে। যুবকরা সেখানে খেলাধুলা করতে পারবে। এই এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে। এজন্য স্টেডিয়াম হাইমচরে অতি প্রয়োজন।’
দেশের অন্যান্য উপজেলায় স্টেডিয়াম হয়ে গেছে, কিন্তু হাইমচরে এখনও আমরা করতে পারছি না উল্লেখ করে নূর হোসেন পাটোয়ারী আরও বলেন, ‘এখন আমরা যে জায়গার জন্য প্রস্তাবনা দিয়েছি, সেখানে তেমন ফসল হয় না। আর অধিগ্রহণের ফলে জমির যে দাম দেওয়া হবে, তা বর্তমান দামের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। জমির মালিকরাই উপকৃত হবেন। আর এই জায়গাটি উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এখানে স্টেডিয়াম হলে পুরো উপজেলার যুবসমাজ খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পাবে। সেখানে স্টেডিয়াম হলে কৃষি ও কৃষকদের তেমন কোনও ক্ষতি হবে না।’
তিনি আরও বলেন, একটি কুচক্রী মহল হাইমচরের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে, যুব সমাজকে ধ্বংস করতে কৃষকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে স্টেডিয়াম তৈরীর বিরোধিতা করছে।
হাইমচর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদার বলেন, ‘এখানে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য অনেক আগেই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। আমি এবং ইউএনও দুজনই উপজেলায় নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। এখন যেহেতু কৃষিজমি দাবি করে স্মারকলিপি এসেছে, আসলে কৃষিকাজে ব্যবহার হচ্ছে কিনা; তা যাচাইয়ের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবেন।’
হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা বলেন, প্রস্তাবিত জায়গাটি ফসলি জমি কিনা, তা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রতিবেদন জমা দিলে স্টেডিয়াম হলে কতটা লাভ বা ক্ষতি হবে আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে সেই তথ্য পাঠাবো।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকিল খন্দকার বলেন, ‘স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত জমি ফসলি কিনা, তা তদন্ত করার জন্য ঈদুল আজহার আগে আমাকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ঈদের পর থেকে তদন্ত শুরু করেছি। এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেবো।