কচুয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী তেগুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু তাহের পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গত ৬ অক্টোম্বর ওই ইউনিয়নের সচেতন নাগরিকদের পক্ষে তেগুরিয়া গ্রামের অধিবাসী ও ওই প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থী ইব্রাহিম পাটওয়ারী বাদী হয়ে কচুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ইউএনও’র কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে বিগত ১৫ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক মো. আবু তাহের পাটওয়ারী বিগত ক্ষমতাসীন আওয়ামী নেতা-কর্মীদের ছত্রছায়ায় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে বিদ্যালয়টির আর্থিক বিষয়াদি নিজেই পরিচালনা করতেন। এভাবেই তিনি বিদ্যালয়টির প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বে-সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা প্রবিধানমালা ২০০৯ এর ৪৫নং প্রবিধিতে বিদ্যালয়ের কোন লেনদেনই ‘নগদে করা যাবেনা’ মর্মে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। অথচ প্রধান শিক্ষক আবু তাহের পাটওয়ারী সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কোন লেনদেন করেননি। বিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রেও কোন সরকারি নির্দেশনা তিনি মানেনি।
২০১৩ সালে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১১শ। বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে ৬শ জন। প্রধান শিক্ষকের অযোগ্যতা ও দূর্নীতি পরায়ন চরিত্রের কারণে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। তিনি বিভিন্ন সময় প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকদেরকে জিম্মি করে রাখতেন। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রায় ৮ মাস যাবৎ শিক্ষকদের বেতন (প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদেয়) বন্ধ/বকেয়া রয়েছে। ২০১৮ সালে বিদ্যালয়ের ব্যাংক স্থিতি ছিল প্রায় বিশ লক্ষ টাকা আর এখন প্রায় শূন্য অবস্থায় রয়েছে। প্রধান শিক্ষক ৩ লক্ষ টাকার ভূয়া বিল ভাউচার অনুমোদনের জন্য সভাপতি বরাবর দাখিল করেছেন। বিল ভাউচার প্রস্তুতে কোন সরকারি নির্দেশনা অনুসরন করেননি। এ বিল সম্পর্কে শিক্ষকগনও জানেনি। বিধি মোতাবেক কাজ করার পূর্বে পূর্বানুমতি নিয়ে কার্যসম্পাদন শেষে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরনপূর্বক (টেন্ডার কমিটির রেজুলেশন, কোটেশন, নির্দিষ্ট রেজিষ্টার, নথি ইত্যাদি সংরক্ষন) বিল অনুমোদনের পর অর্থ অ/ঈ পেয়ী এই চেকের মাধ্যমে প্রদান করতে হয়। কিন্তু তিনি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের আট মাসের বেতন বকেয়া রেখে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে গোপনে অসৎ উদ্দেশ্যে এ বিল ভাউচার প্রস্তুত করেন বলে অভিযোগ উঠে।
লিখিত অভিযোগে আরো উল্লেখ্য করেন, প্রধান শিক্ষক আবু তাহের পাটওয়ারী ৬০-৭০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে চাংপুরের নিজ গ্রামে ব্যক্তিগত বাড়ি নির্মান করেছেন। ২০-৩০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ছেলেকে প্রাইভেট মেডিকেলে পড়িয়েছেন এবং সাচার দক্ষিণ বাজারে ৫০-৬০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পপুলার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে। বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের আট মাসের বেতন বকেয়া রেখে কোন যুক্তিতে ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে তিন লক্ষ টাকার বিল দাখিল করেছেন তা বোধগম্য নয় বলে অভিযোগ উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম একজন দাবি করে সুলতান আহমেদ জানান, প্রধান শিক্ষক আবু তাহের পাটওয়ারী নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি তার ইচ্ছেমত সকল কাজ পরিচালনা করেন। সর্বশেষ তিনি ৩ লক্ষ টাকার ভূয়া বিল ভাউচার অনুমোদনের জন্য সভাপতি বরাবর দাখিল করেছেন। আমরা এই দুর্নীতিবাজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানাই।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আবু তাহের পাটওয়ারী জানান, ইউএনও’র কার্যালয়ে ইব্রাহিম পাটওয়ারীর লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত নই। এরকম কোন ঘটনা হয়নি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করা ছাড়া অন্য কিছু না।
এ ব্যাপারে কচুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রধান শিক্ষক আবু তাহের পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।