ফরিদগঞ্জ শহরের উন্নয়নের জন্য ২০০৫ সালে পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়। পৌর মেয়র মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটোয়ারী প্রচেষ্টায় বর্তমানে এটি একটি “ক” শ্রেণীর পৌরসভায় উন্নতি হয়।
২০২১ সালের ১৪ মার্চ পৌরসভার সিংহ ভাগ কর্মীদের ৩ থেকে ১১ মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা বকেয়া মাথায় নিয়ে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্বে আসেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি যুদ্ধ আহত মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী। দায়িত্বে আসার কিছু দিনের মধ্যেই পৌর মেয়র হয়ে যান অসুস্থ। তার অসুস্থতার সুযোগে পৌরসভার কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা করতে থাকেন দুর্নীতি। যার দায়ভার গিয়ে পড়ে দায়িত্বে থাকা পৌর মেয়রের কাঁধে।তাই বৃদ্ধ বয়সে পিতা আবুল খায়ের পাটোয়ারী কে সহযোগিতা করেন তার কন্যা নাজমুনন্নাহার অনি। নাজমুনন্নাহার অনি পৌরসভার কাজে তার বাবাকে সহযোগিতা করুক তা মানতে পারেনি পৌর সভার কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। যার দরুন পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে সৃষ্টি হয় দুটি গ্রুপ।
বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজশে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কিছু কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা/ কর্মচারী বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ দিত। চাঁদপুরের নামিদামি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আজিজ বাদ্রাস জানান, সাবেক মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারী’র অজান্তে তাকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার দেলোয়ার হোসেন ৯ লক্ষ, সহকারী প্রকৌশলী মরহুম নজরুল ইসলাম ৯ লক্ষ ও কাউন্সিল আবদুল মান্নান পরান ৯ লক্ষ টাকা করে মোট ২৭ লক্ষ টাকা নেন।পরে সাবেক মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারী ও তার কন্যা নাজমুনন্নাহার এর হস্তক্ষেপ ইঞ্জিনিয়ার দেলোয়ার, সহকারী প্রকৌশলী মরহুম নজরুল ইসলাম দুজন থেকে ৯ লক্ষ টাকা করে ১৮ লক্ষ টাকা আজিজ বাদ্রাস কে ফেরত দেন। কাউন্সিলর পরান দুই কিস্তিতে ৬ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেন। ইঞ্জিনিয়ার দেলোয়ার আজিজ বাদ্রাসকে টাকা ফেরত দেয়ার কথা স্বীকারও করেন। অথচয় ৫ ই আগস্ট ক্ষমতার পালাবদল হলে এরা তাদের দুর্নীতির দায় আওয়ামী লীগের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মেয়র ও তার মেয়ের কাঁধে চাপিয়ে দেন। অথচ পৌরসভার সকল কাজে ইঞ্জিনিয়ার দেলোয়ারকে দিতে হত মোটা অংকের টাকা। টাকা চারা কোন প্রকল্পের কাজে সাইন হত না তার।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ক্যাশিয়ার গিয়াসউদ্দিন আত্মগোপন চলে যায়। অফিস সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট দুপুর বেলায় ৭, ৮ আগস্ট ছুটির দরখাস্ত দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি, ২০ আগস্ট মঙ্গলবার পযর্ন্ত তিনি অফিসে আসেননি। ১৫ দিন তিনি অনুপস্থিত। অফিস সুত্রে আরো জানা যায়, আত্মগোপনে থেকে ক্যাশিয়ার গিয়াসউদ্দিন ৮-১১ আগস্ট চেকের মাধ্যমে ৫ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা তুলেনেন । ১৩ আগস্ট মঙ্গলবার স্থানীয় ও জাতীয় একাধিক পত্রিকায় ( তার বিলাসবহুল বাড়ি, মার্কেট, জমি নিয়ে) শিরোনাম করে নিউজ প্রকাশিত হয়। তার দূর্নীতি নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা তার পদত্যাগের দাবিতে পৌরসভা কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। অথচয় সে এখন তার দোষ অন্যের কাঁধে চাপিয়ে দিতে জনে জনে মেয়র ও তার কন্যার দোষ কয়ে বেড়াচ্ছেন।
পৌরসভার এই অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে ফরিদগঞ্জ বাজারে ড্রেন ও সিসি ঢালাইয়ের জন্য ঠিকাদারের ক্রয়কৃত ৪০ টন রড চুরি হয়। তাদের ইন্দনে ও স্থানীয় কিছু লোকজনের মাধ্যমে ভাঙচুর, লুটপাট ও জ্বালানো হয় আবুল খায়ের পাটোয়ারী বাড়ি। পুড়ানো হয় তার কন্যার ব্যাংক লোনে ক্রয়কৃত গাড়ী।
পৌর মেয়রের কন্যা পৌরসভায় ৬ জনকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে ৩০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠে। অথচয় নিয়োগকৃত ৬ জনই বলে উল্টো কথা, তারা নিয়োগের সরকারি সকল নিয়ম মেনেই মেধার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছে। কাউকে টাকা দিয়ে নয়।
জানা যায়, ২০১৫ সালে পৌরসভার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজনৈতিক বিবেচনায় মাস্টারারোলে ৩০ জনের বেশি লোক নিয়োগ করেন আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী মেয়র মো. মাহফুজুল হক। প্রতিমাসে যাদের ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার বেশি বেতন-ভাতা দিতে হয়। মাস্টার রোলে নিয়োগকৃত এসকল কর্মীদের মেয়রের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে উপস্থিতি ছাড়া তেমন কোন কাজই ছিল না। এরাই পৌর মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারীকে বির্তক করার জন্য পদে পদে চেষ্টা করে।
পৌরসভার ৯ টি ওয়ার্ডের চরবসন্ত, উত্তর কেরোয়া, মধ্য ও দক্ষিণ কেরোয়া, গুদারারচর, মিরপুর, নোয়াগাঁও, ভাটিরগাঁও(উত্তর অংশ), নোয়াগাঁও ভাটিরগাঁও (দক্ষিণ অংশ), রুদ্রগাঁও,পূর্ব বড়ালি, পশ্চিম বড়ালী, সাফুয়া,চরহোগলা, দক্ষিণ কাছিয়াড়া, কাছিয়াড়া (ফরিদগঞ্জ বাজার) চরকুমিরা, ভাটিয়ালপুর এলাকা ঘুরে ঘুরে জানা যায় ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র, তার কন্যা ও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা তথ্য। পৌরবাসী পৌর মেয়র ও তার কন্যার বিরুদ্ধে যেমন কিছু কিছু অনিয়মের অভিযোগ তুলেন, তেমনি তাদের ভালো কাজের প্রশংসাও করেন। বিশেষ করে মহিলারা পৌর মেয়রের কন্যাকে তাদের বোন মনে করে। মেয়র কন্যা সুখে দুখে সব সময় তাদের পাশে ছিল। তবে সবাই এক বাক্যে পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার দেলোয়ার ও ক্যাশিয়ার গিয়াসউদ্দিনের দ্রুত অপসারণ চায়।