চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার অপব্যাবহার করে জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে অযোগ্য ১০জনকে প্রভাষক পদে নিয়োগের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। হোমিওপ্যাথি বোর্ডের চাকুরী নিয়োগ বিধিমালা অমান্য করে নানান অবৈধ পন্থায় স্থানীয় পেশি শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কলেজের প্রভাষক পদে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন চাকুরী করে আসছেন ওই ১০ প্রভাষক।
একটি বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, শাহরাস্তির দোয়াভাঙ্গায় অবস্থিত চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের ১০জন প্রভাষক তাদের কারো কারো বয়স বেশী, কারো ডি,এইচ,এম,এস পাসের সার্টিফিকেট, কারো রেজিষ্ট্রশন সনদে বিভিন্ন রকমের অনিয়ম থাকা সত্বেও তৎকালীন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার অপব্যাবহার করে, স্থানীয় পেশি শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক প্রকার জোর জবরদস্তির মাধ্যমে ১০জন চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
আলোচিত ১০জন শিক্ষক যে সব কারণে হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের প্রভাষক হিসেবে অযোগ্য তা আলাদা আলাদা করে তুলে ধরা হলো।
১. ডা. আব্দুল বাসেত ঃ
ডা. আব্দুল বাসেত’র জন্ম ২৩ মে ১৯৭৩ খ্রি.। তিনি চাকুরীতে যোগদান করেন ২১ ডিসেম্বর ২০০৮ খ্রি.। যোগদানকালীন সময়ে তার বয়স ছিলো ৩৫ বছর ৬ মাস ২৮ দিন। যা নিয়োগ বিধিমালা ও বিধিবহির্ভূত। প্রভাষক ডা. আব্দুল বাসেত’র চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন নং- ২১৩৮২। এটি প্রদানের তারিখ: ২৭ জুন ২০১১ খ্রি.। আব্দুল বাসেত চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার ৩ বছর আগেই প্রভাষক পদে যোগদান করেন। তার এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি অনিয়ম ও বিধিবহির্ভূত।
২. ডা. নাছরীন সুলতানা ঃ
ডা. নাছরীন সুলতানা প্রভাষক পদে যোগদান করেন ১৩ মার্চ ২০১৪ খ্রি.। তার চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন নং-২৭৪৪৪। এটি প্রদানের তারিখ: ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ খ্রি.। তিনিও চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার ৩ বছর পূর্বে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। তার এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটিও অনিয়ম ও বিধিবহির্ভূত।
৩. ডা. নাজভীন সুলতানা ঃ
ডা. নাজভীন সুলতানা’র প্রভাষক পদে যোগদানের তারিখ: ১১ অক্টোবর ২০১০ খ্রি.। চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন নং- ২৬৭৯৮। এটি প্রদানের তারিখ: ৩ নভেম্বর ২০১৬ খ্রি.। তিনি চিকিৎসক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার ৬ বছর পূর্বে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। তার নিয়োগ প্রক্রিয়াটি অনিয়ম ও বিধিবহির্ভূত।
৪. ডা. ফাতেমা আক্তার ঃ
ডা. ফাতেমা আক্তার’র প্রভাষক পদে যোগদানের তারিখঃ ১২ অক্টোবর ২০১০ খ্রিঃ। চিকিৎসক রেজিস্ট্রশন নং ২৬৮০২। এটি প্রদানের তারিখঃ ০৩ নভেম্বর ২০১৬ খ্রি। তিনি চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার ৬ বছর পূর্বে প্রভাষক পদে যোগদান করায় তার নিয়োগ প্রক্রিয়াটি অনিয়ম ও বিধিবহির্ভূর্ত।
৫. ডা. গোলাম সরোয়ার ঃ
ডা. গোলাম সরোয়ার’র প্রভাষক পদে যোগদানের তারিখ: ১৮ মার্চ ২০১৪ খ্রি.। তার চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন নং- ২৬৬৪২। এটি প্রদানের তারিখ: ২২ জুন ২০১৬ খ্রি.। তিনি চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার ২ বছর পূর্বে প্রভাষক পদে যোগদান করায় তার নিয়োগ প্রক্রিয়াটি অনিয়ম ও বিধিবহির্ভূত।
৬. ডা. ফরিদ আহম্মদ ঃ
ডা. ফরিদ আহম্মদ চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে প্রভাষক পদে থাকাকালীন একই সাথে প্রগেসিভ লাইফ ইনসিওরেন্স এর চাঁদপুর শাখার শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি প্রভাষক পদে যোগদান করেন ১৮ ডিসেম্বর ২০০৮ খ্রি.। তার চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন নং- ২৬৭৯৭। এটি প্রদানের তারিখ: ২২ জুন ২০১৬ খ্রি.। সেই অনুসারে চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন নাম্বারের যোগ্যতার ৮ বছর পূর্বে প্রভাষক পদে যোগদান করায় নিয়োগ প্রক্রিয়াটি অনিয়ম ও বিধিবহির্ভূত।
৭. ডা. নুরুল আলম ঃ
ডা. নুরুল আলম এর জন্ম ০১ জানুয়ারি ১৯৭৬ খ্রি.। তিনি চাকুরিতে যোগদান করেন ২১ ডিসেম্বর ২০০৮ খ্রি.। যোগদানকালীন সময়ে উনার বয়স ছিলো ৩২ বছর ১১ মাস ২০ দিন। যা নিয়োগ বিধিমালা ও বিধিবহির্ভূত। এই প্রভাষক এর চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন সনদপত্র এখনো কলেজে জমা দেন নাই। এটি সম্পূর্ন অনিয়ম ও বিধিবহির্ভূত কাজ।
৮. ডা. মোহাম্মদ ইয়াছিন ঃ
ডা. মোহাম্মদ ইয়াছিন প্রভাষক পদে যোগদান করেন ২২ ডিসেম্বর ২০০৮ খ্রি.। তার চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন নং- ২৬১৮১। এটি প্রদানের তারিখ: ২২ জুন ২০১৬ খ্রি.। তিনি চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার ৮ বছর পূর্বে প্রভাষক পদে যোগদান করায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি অনিয়ম ও বিধিবহির্ভূত।
৯. ডা. মো: আবুল বাশার ঃ
ডা. মো: আবুল বাশার প্রভাষক পদে যোগদান করেন ২১ ডিসেম্বর ২০০৮ খ্রি.। তার চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন নং- ২৭৪৫২। এটি প্রদানের তারিখ: ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ খ্রি.। তিনি চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার ৯ বছর পূর্বে প্রভাষক পদে যোগদান করায় নিয়োগ প্রক্রিয়াটি অনিয়ম ও বিধিবহির্ভূত।
১০. ডা. বিলকিছ আক্তার ঃ
ডা. বিলকিছ আক্তার’র জন্ম ১ অক্টোবর ১৯৭৫ খ্রি। তিনি প্রভাষক পদে যোগদান করেন ২১ ডিসেম্বর ২০০৮ খ্রিঃ। চাকুরীতে যোগদানকালীন সময়ে তার বয়স ছিলো ৩৩ বছর ২ মাস ২০ দিন। ডা. বিলকিস আক্তারের চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন নং ২৬৮০২। এটি প্রদানের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ১০১৬ খ্রিঃ। তিনি চিকিৎসক রেজিস্ট্রশন পাওয়ার ৮ বছর পূর্বে প্রভাষক পদে যোগদান করায় তার নিয়োগ প্রক্রিয়াটি অনিয়ম ও বিধিবহির্ভূত ।
উল্লেখিত অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রত্যেক শিক্ষকের সাথে আলাদা আলাদাভাবে দৈনিক প্রভাতী কাগজ’র পক্ষ থেকে কথা বলার জন্য সেল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। এদের কেউ কেউ বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ৬ জনের ফোনে কল হলেও তার রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয় সম্ভব হয়নি।
ডাঃ নুরুল আলম’ সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সাংবাদিকে কে তথ্য দিয়েছে তা না বললে বক্তব্য দিবো না। তিনি সাংবাদিকের নিকট তথ্য দাতার নাম জানতে চেয়েছেন।
ডাঃ ফরিদ আহম্মদ বলেন, যে তথ্য দিয়েছেন তার কাছ থেকে আমার নিয়োগের বিষয়ে যেনে নিয়েন। সাংবাদিক যা ইচ্ছে তা লেখুক।
ডাঃ মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, আমার নিয়োগের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান অধিকার নেই। সাংবাদিক কেন আমাকে প্রশ্ন করবে।
ডাঃ ফাতেমা আক্তার বলেন, কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কলেজের পাশে রয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী আমার চাকুরি হয়েছে।