কচুয়ার রহিমানগরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউসুফ সফর আলী দারুল উলূম দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোঃ মুনিরুজ্জামান (৫১) কে জোরপূর্বক তার পদ থেকে সরিয়ে সহকারী সুপার মোঃ জিয়াউর রহমান সুপার পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার খায়েশ মিটানে নিজেই নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার সরকারের পতন হলে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখা দেয় অরাজকতা। সারা দেশে অসৎ উদ্দেশ্যে ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য না দেখে কোমল মতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে টেনেহিঁচড়ে প্রধান শিক্ষক, সুপার, অধ্যক্ষকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক সরাতে দেখা যায়। এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করা ও হয়রানি করা থেকে বিরত থাকুন। লক্ষ করা যাচ্ছে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করাসহ নানা ধরনের হয়রানির ঘটনা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষা উপদেষ্টার এই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বারবার হেনস্ত করে পদত্যাগের জন্য বাধ্য করা হচ্ছে ইউসুফ সফর আলী দারুল উলূম দাখিল মাদ্রাসার সুপার’কে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের লেলিয়ে দিয়ে স্থানীয় প্রতিপক্ষ কিছু লোকদের ম্যানেজ করে এই অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মাদ্রাসারই সহকারী সুপার মোঃ জিয়াউর রহমান। বর্তমান সুপারকে পদত্যাগ করিয়ে সে মাদ্রাসার সুপার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। ফলে তার নেতৃত্বে একের পর এক এই সব সাজানো নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে রহিমানগরে।
সরজমিনে জানা যায়, ৫ আগস্ট গনঅভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট মাদ্রাসা খোলে দেওয়া হয়। মাদ্রাসার সুপার মুনিরুজ্জামান ৫ আগস্টের পূর্বে অসুস্থার কারণে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। ছাত্রজনতার আন্দোলনে সরকার পতন হলে মাদ্রাসার সহকারী সুপার জিয়াউর রহমান স্বপ্ন দেখের সুপার রনে যাওয়ার। তাই সুপার মুনিরুজ্জামানকে সরানোর জন্য বিভিন্ন নীল নকশা করতে থাকেন জিয়াউর রহমান। এদিকে ছুটি শেষ হওয়ায় অসুস্থ অবস্থাই ১১ আগস্ট মাদ্রাসায় আসেন সুপার মুনিরুজ্জামা। মাদ্রাসায় আসার কিছুক্ষণ পর সহকারী সুপার জিয়াউর রহমান তার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কল করে বহিরাগত লোকজন ও কিছু মাদ্রাসার ছাত্র জড়ো করে আন্দোলন করে মাদ্রাসা ভাংচুর করান। পরে স্থানীয় কিছু লোকজন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করেন। সুপার মুনিরুজ্জামান অসুস্থ থাকার কারণে স্থানীয় এলাকাবাসী, আন্দোলনকারী, মাদ্রাসার সকল শিক্ষক শিক্ষার্থী ১৪ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসায় বসে বিষয়টি সমাধান করবে বলে জানান। চিকিৎসার জন্য সুপার মুনিরুজ্জামান পুনরায় ছুটি নিলে সহকারী সুপার জিয়াউর রহমানকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই সুযোগে সহকারী সুপার জিয়াউর রহমান নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসেবে পরিচয় দিতে থাকেন। নিজের নামে ভারপ্রাপ্ত সুপার এর সীল মোহর তৈরি করে ব্যবহার শুরু করেন। কোন নিয়মনীতি রেজুলেশন চাড়াই তিনি গায়ের জোরে ভারপ্রাপ্ত সুপার। মাদ্রাসা সুত্রে জানা যায়, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির মেয়াদ ১৭-০৭-২০২৪ তারিখেই শেষ হয়ে যায়। তাহলে জিয়াউর রহমান কিভাবে ভারপ্রাপ্ত সুপার হলেন? কে তাকে ভারপ্রাপ্ত সপারের দায়িত্ব দিলো সেই প্রশ্ন সচেতন মহলের।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১৪ সেপ্টেম্বর শনিবার বন্ধের দিন সকাল ১০ ঘটিকায় মুনিরুজ্জামান মাদ্রাসায় উপস্থিত হয়ে তার অফিস কক্ষে অবস্থান করেন। এই সময় মাদ্রাসার সহকারী সুপার জিয়াউর রহমান, মৌলভী শিক্ষক আব্দুল হান্নান, কৃষি শিক্ষক মাসুদ, সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক নারগিস আক্তার, শরীর চর্চা শিক্ষক নারগিস সহ আরো কয়েকজন শিক্ষক, আন্দোলনকারী ও স্থানীয় কিছু লোকজন উপস্থিত হন। সকাল ১১ ঘটিকায় বৈঠকের নামে সুপার মুনিরজ্জামন এর সাথে জিয়াউর রহমান, মাসুদ রানা, রাকিব হোসেন, তারেক আহম্মেদ সুজন সহ আরো কয়েকজন সুপারকে পদত্যাগের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। মুনিরুজ্জামান পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে জিয়াউর রহমান ও তার দলবল সুপারের পাঞ্জাবির কলার ধরে টানা হেছড়া করেন এবং কিলঘুষি, লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন। হৈচৈ শুনে অন্যান্য শিক্ষকগন এগিয়ে এলে জিয়াউর রহমান ও তার দলবল সুপার মুনিরুজ্জামানকে খুন করার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এই বিষয়ে সুপার মুনিরুজ্জামান ২৩ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞ বিচারক আমলি আদালত কচুয়া চাঁদপুরে জিয়াউর রহমান, মাসুদ রানা, রাকিব হোসেন, তারেক আহম্মেদ সুজন কে বিবাদী করে সি আর ৬১২ নং মোকদ্দমা দায়ের করেন। যা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপ পরিদর্শক আমেনা বেগম তদন্ত করে রিপোর্ট আদালতে প্রদান করেছেন।
মাদ্রাসার সমাজ বিজ্ঞান ও শরীর চর্চার শিক্ষক নারগিস আক্তার জানান, কিছু ছাত্র, কিছু বখাটে, স্থানীয় লোকজন এসে মাদ্রাসায় আন্দোলন করেন। মাদ্রাসার টয়লেট ভাংচুর করে। ১৪ সেপ্টম্বর বসার কথা বলে অফিস কক্ষে হুজুরের দাঁড়ি টানাটানি করে, কিল, ঘুষি লাথি মারে। আমরা বাঁধা দেই।
স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ী হাজী কবির আহমেদ জানান, সুপার মুনিরুজ্জামান এর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ ছিল অভিভাবকদের। তাই ছাত্ররা আন্দোলন করে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি।
স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ফারুকী বলেন, মুনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ছাত্ররা আন্দোলন করেছে, তাই আমি সেখানে গিয়েছি। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। মাদ্রাসা চলার জন্য জিয়াউর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পর আইন অনুযায়ী যা হবার তাই হবে। আমরা শুধু পরিস্থিতি ঠান্ডা রেখেছি।
সহকারী সুপার জিয়াউর রহমান বলেন, সুপার হুজুরের অসুস্থার কারনে আমাকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি সুস্থ হয়ে আসলে তিনি পুনরায় সুপারের দায়িত্ব পালন করবেন, আমি আমার সহকারী সুপার পদে দায়িত্ব পালন করবো।