কয়েক দিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা। এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি কোরবানির পশুর হাট। অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে কিছু পশু। গোখাদ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে আছেন খামারিরা। ভালো দাম না পেলে ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা তাঁদের। চাঁদপুর জেলায় কোরবানির পশু বিক্রির অপেক্ষায় আছেন ২ হাজার ৭শ’ ৬০ প্রান্তিক খামারি। ভালো দামের আশায় দিন গুনছেন তাঁরা।
চাঁদপুর জেলায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর প্রাপ্যতা ও চাহিদা রয়েছে ৭০ হাজার ২শ’ ৩০টি। আর কোরবানিযোগ্য পশু আছে ৩৫ হাজার ৪শ’ ২টি। ফলে চাহিদার তুলনায় ৩৪ হাজার ৮শ’ ২৮টি পশুর সঙ্কট রয়েছ। প্রাণিসম্পদ দফতরের তথ্যানুযায়ী জেলায় কারবানির জন্য চাহিদার চেয়ে গরু কম রয়েছে প্রায় অর্ধকের মত। জেলায় এবার অস্থায়ী পশুর হাট ২২৫টি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে চাঁদপুর জেলার ইজারা দেওয়া প্রতিটি পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমসহ তদারকি কর্মকর্তারা থাকবেন।
পাঁচ বছর ধরে গরুর খামার করছেন লায়ন ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর ভাষ্য, কোরবানির জন্য এবার ৩৫টি গরু প্রস্তুত। এর মধ্যে ৭টি বলদ ও ২৮টি ষাঁড়। খামারে ৭০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে।
ওটারচর গ্রামের আবদুল লতিফ মিয়াজী বলেন, তাঁর খামারে ২২টি গরু রয়েছে। ভুসি, খেসারি, সূর্যমুখীর খল্লি এবং নেপিয়ার ঘাস খাওয়ানো হয়েছে। খাদ্যের দাম অতিরিক্ত। ৩৫ কেজি ভুসির বস্তার দাম বেড়ে এখন ১৮০০ টাকা। প্রতি কেজি খেসারি ৬৫ টাকা। পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি দামে গরু মানিরকের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, ১৯টি বড় গরু রয়েছে তাঁর খামারে। হাট না বসলেও অনলাইনে ক্রেতাদের সাড়া পাচ্ছেন। এখনও গরু বিক্রি শুরু করেননি। এবারের বাজার কেমন হবে, বোঝা মুশকিল।
চরকাশিমের ইব্রাহিম গাজীর দাবি, ৬টি গরু রয়েছে তাঁর। ন্যায্য দামে পশু বিক্রি না হলে লোকসান গুনতে হবে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে খামার করেছেন তিনি। নিজের পরিশ্রম হিসাবের বাইরে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানা যায়, চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলায় খামারী রয়েছে ২ হাজার ৭শ’ ৬০ জন। জেলায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে ৩৫ হাজার ৪শ’ ২টি। এরমধ্যে ১৩ হাজার ৫শ’ ৪৮টি গবাদিপশুর মধ্যে ষাঁড়, ৬ হাজার ৯শ’ ৮২টি বলদ, ৫ হাজার ৩শ’ ৫৪টি গাভী, মহিষ ৫৫টি, ৮ হাজার ৩শ’ ৩২টি ছাগল, ১ হাজার ৮টি ভেড়া এবং অন্যান্য ১২৩টি।
চাঁদপুর সদর উপজলায় ৪৯০ জন খামারীর ২৯২১টি ষাঁড়, ২৮৮টি বলদ, ৬৪৬টি গাভী, ৬৮২টি ছাগল ও ৭৫টি ভেড়া রয়েছে।
মতলব দক্ষিণ উপজলায় ১২৬ জন খামারীর ৭৬৪টি ষাঁড়, ৩২১টি বলদ, ১৬৮টি গাভী, ৫৬৬টি ছাগল, ৭৩টি ভেড়া ও অন্যান্য ১২৩টি রয়েছে। মতলব উত্তর উপজলায় ২৫৪ জন খামারীর ৯৬৪টি ষাঁড়, ৫৩৪টি বলদ, ৩৯২টি গাভী, ৩৭৬টি ছাগল ও ১৪৩টি ভেড়া রয়েছে। কচুয়া উপজলায় ৩০৬ জন খামারীর ২৭৫৪টি ষাঁড়, ১০৪২টি বলদ, ৯৫৩টি গাভী, ২৪৪৩টি ছাগল ও ৩৩২টি ভেড়া রয়েছে। শাহরাস্তি উপজলায় ৪৫০ জন খামারীর ১৩৫৪টি ষাঁড়, ৯১২টি বলদ, ৮৯৪টি গাভী, ৬৫৪টি ছাগল ও ২৫৫টি ভেড়া রয়েছে। হাজীগঞ্জ উপজলায় ৪০৫ জন খামারীর ২০৮৫টি ষাঁড়, ৩০৪৫টি বলদ, ১৭৩২টি গাভী, ২৫০০টি ছাগল ও ১৩০টি ভেড়া রয়েছে। ফরিদগঞ্জ উপজলায় ৪৭৬ জন খামারীর ১৮৬০টি ষাঁড়, ৬১০টি বলদ, ৩৮০টি গাভী, ৭৭০টি ছাগল রয়েছে। হাইমচর উপজলায় ২৫৩ জন খামারীর ৮৪৬টি ষাঁড়, ২৩০টি বলদ, ২৮৯টি গাভী, ৩৪১টি ছাগল রয়েছে।
চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, কোরবানীর জন্য এ বছর গবাদিপশুর চাহিদা রয়েছে ৭০ হাজার ২৩০টি। জেলায় চাহিদার তুলনায় কোরবানির পশুর সঙ্কট রয়েছ। প্রতি বছর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে চাঁদপুরের হাট গরু-ছাগল বিক্রি করতে আনা হয়। ফলে চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। আমরা উপজেলাভিত্তিক খামারীদের সবসময় পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে গরুর খাবারের দাম বেশি হওয়ায় বিপাকে পড়েছে খামারিরা।
তিনি আরো বলন, জেলায় ২২৫টি হাট কোরবানির গরু-ছাগল বিক্রি করা হয়। সঙ্কট আছে ভেবে কোনাভাবই জেলায় ভারতীয় গরু ঢুকতে দেয়া ঠিক হবে না। তাহলে খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বে। ভারতীয় গরু ঠেকাতে পারলে খামারিরা লাভবান হবেন।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জানান, কোরবানির হাটগুলোতে মেডিকেল টিম এবং জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন রাখা হবে। হাটের টাকা লেনদেনের সুবিধার্থে ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা নেওয়া হবে।