মতলব উত্তর উপজেলার এখলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেছেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল আদালত।
২৫ জুন কুমিল্লা সদর কোর্টের সিনিয়র সহকারী জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব প্রাপ্ত বিচারক শহীদুল্লাহ্ কায়সার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল মোকদ্দমা নং ৪/২০২৩ ইং মূলে এ রায় ঘোষণা করেন এবং নির্বাচন কমিশন কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আদেশ প্রদান করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায় যে, বিগত ২৮ নভেম্বর ২০২১ ইং তারিখে চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলাধীন এখলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয় এবং এডভোকেট জসিম উদ্দিন উক্ত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। উক্ত নির্বাচনে মো. মফিজুল ইসলাম মটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। এখলাশপুর ইউনিয়নের মোট ৯ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের মেঘনা নদীর পশ্চিমে চরাঞ্চলে অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার একমাত্র পথ ট্রলার। ভোট গ্রহণের দিন উক্ত কেন্দ্রগুলোতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এডভোকেট জসিম উদ্দিনের এজেন্টদেরকে মটর সাইকেল প্রতীকের লোকজন বের করে দেয়। উক্ত বিষয়ে কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসারদের ফোন করে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
উল্লিখিত কেন্দ্রগুলোতে মৃত ব্যক্তির ভোট প্রদান করে, একজন এর ভোট আরেকজনের নামে প্রদান করে, বাতিলকৃত ভোট মটর সাইকেল প্রতীকের নামে গণনা করে, প্রকাশ্যে ভোট গণনা না করে, নৌকা প্রতীকের ১৩০টি ভোটের বান্ডেলকে ১০০ ভোটের বান্ডেল এবং মটর সাইকেলের ৭০টি ভোটের বান্ডেলকে ১০০ টি ভোট গণনা করে কাল্পনিক ও বেআইনি ফলাফল প্রকাশ করেন বলে দাবী করেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এডভোকেট জসিম উদ্দিন মামলা চলাকালীন সংশোধনী দরখাস্ত আনয়ন করে এখলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সকল কেন্দ্রের ফলাফল বেআইনি দাবি করে প্রতিকার প্রার্থনা আবেদন করে।
মামলার বাদী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এডভোকেট জসিম উদ্দিনের আনিত দরখাস্তে দাবি করেন যে, মটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী মফিজুল ইসলাম অবৈধভাব প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচন ফলাফলে অনিয়ম করেন এবং নিজ পক্ষে ফলাফল প্রস্তুত করান। অপরদিকে মফিজুল ইসলাম উক্ত দাবি অস্বীকার করেন। কিন্তু উভয়পক্ষ সকল কেন্দ্রের ভোট গণনা বিষয়ে আপোষ করে নিবেদন করেন যে, সকল কেন্দ্রের ভোট গণনার পর প্রাপ্ত ফলাফল এর ভিত্তিতে মামলা নিষ্পত্তি হতে তাদের আপত্তি নেই।
সে প্রেক্ষিতে ভোট পুনঃগণনা করে দেখা যায় যে, এখলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ থেকে ৬ নং কেন্দ্র সমূহে নির্বাচনের দিন প্রকাশিত ফলাফলের সাথে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক পুনঃগণনাতে প্রাপ্ত ফলফলের গরমিল আছে। উক্ত ১থেকে ৬ নং কেন্দ্র সমূহে নির্বাচনের দিন সঠিকভাবে ভোট গণনা করে ফলাফল প্রকাশিত হয় নাই মর্মে ট্রাইব্যুনালের নিকট প্রতীয়মান হয়। ৭ ও ৮ নং কেন্দ্রে ডাবল সীলযুক্ত কিছু ব্যালট পাওয়া যায় নৌকা প্রতীকের ভোটের বান্ডেলে। উক্ত ভোটগুলো প্রকৃতপক্ষে বৈধ ভোট না অবৈধ ভোট সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয় নাই। ৯নং কেন্দ্রে মটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী ৫৩৭ ভোট পেয়েছেন মর্মে ফলাফল প্রকাশ করা হলেও গণনার সময় ৩৩৭ টি ব্যালট পাওয়া যায়। এসব বিষয় সমূহ পর্যালোচনা করে ট্রাইব্যুনালের নিকট প্রতীয়মান হয়।
যে, এখলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সঠিকভাবে ভোট গণনা হয় নাই। নির্বাচনের দিন প্রকাশিত ফলাফল এবং পুনঃগণনার ফলাফল তুলনা করলে গণনায় যে অনিয়ম হয়েছে তা স্পষ্টভাবে প্রমানিত হয়। যেহেতু ভোট গণনার অনিয়মের কারণে মটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী সুবিধা প্রাপ্ত হয়েছেন তাই পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি প্রমান করে যে, মফিজুল ইসলাম বেআইনভাবে ভোট গণনা করিয়ে যোগসাজশি একটি ফলাফল প্রাপ্ত হয়েছেন। ফলে মটর সাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মফিজুল ইসলাম কে বিজয়ী ঘোষণা করা বেআইন ও অবৈধ মর্মে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে সকল কেন্দ্রের সকল প্রার্থীর প্রাপ্ত বৈধ ভোটার সংখ্যা নিরূপন করা সম্ভব হয় নাই বিধায় কাউকে বিজয়ী ঘোষণার আদালতের কোন সুযোগ নেই।
আদেশে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নির্বাচন সচিবালয়, চাঁদপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ও মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাচন কর্মকতা, এবং চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে গত নির্বাচনের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী এডভোকেট জসিম উদ্দিন বলেন, আমাকে পরিকল্পিত ভাবে ও কারচুপির মাধ্যমে পরাজিত করা হয়েছিলো তা আদালত কর্তৃক প্রমাণিত হয়েছে এতেই আলহামদুলিল্লাহ। আি আমার ইউনিয়নবাসী আদালতের এ রায়ে সন্তুষ্ট। নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ করব যাতে আদালতের রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করে ইউনিয়নবাসীর আশা পুরন করবে এই প্রত্যাশা করি।