দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৩৬ জন ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে, আর মারা গেছেন ৬ রোগী। এবার ডেঙ্গু ভয়াবহ হয়ে ওঠার আশঙ্কার মধ্যে এই বছরে দিনে এত রোগী আর মৃত্যু আগে দেখা যায়নি।
এইডিস মশাবাহিত এই রোগ নিয়ে শনিবার ৮২০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এর আগে গত ৪ জুলাই একদিনে সর্বাধিক ৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এ নিয়ে জুলাইয়ের প্রথম ৯ দিনে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়াল। মৃত্যু হল ২৬ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে যে ৮৩৬ জন ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৫১৬ জন ঢাকায় এবং ৩২০ জন ঢাকার বাইরের।
নতুন ভর্তি রোগীদের নিয়ে এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১২ হাজার ৯৫৪ জনে। গত এক দিনে মারা যাওয়া ৬ জনকে নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৭৩ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৭৫০ জন রোগী। এদের মধ্যে ঢাকায় ১,৯৬৮ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৮২ জন।
মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে ১০৩৬ জন এবং জুন মাসে ৫৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।
এদের মধ্যে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দুজন, মে মাসে দুজন এবং জুন মাসে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এবার বর্ষা শুরুর আগে থেকেই এইডিস মশাবাহিত এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।
এইডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সামনে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরও বাড়ার আশঙ্কা করেছেন তারা।
গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বর্ষা পূববর্তী জরিপের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকার ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিতে ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এইডিস মশার ঝুকিপূর্ণ উপস্থিতি পা্ওয়া গেছে। এ অবস্থায় ঢাকায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার ঝুকি অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
ঢাকায় এইডিস মশার উপস্থিতি কতটা তা শনিবার ডিএনসিসির এক অভিযানে কিছুটা দেখা গেছে। এদিন ডিএনসিসিরর মেয়র মোহাম্মদপুর এলাকার ছয়টি বাড়ি পরিদর্শন করেন। এতে পাঁচটি বাড়ির নিচতলায় জমে থাকা পানিতে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন।
এইডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে রেকর্ড ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।
এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, যা এ যাবৎকালের সর্বাধিক। সরকারি হিসাবে সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের।