চাঁদপুরের কচুয়ার দক্ষিণ সেঙ্গুয়া গ্রামে ফসলী জমি নষ্ট করে জোর পূর্বক অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের অভিযোগে ড্রেজার মালিককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। বুধবার বিকালে ৫নং পশ্চিম সহদেবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সেঙ্গণয়া গ্রামে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে অবৈধ এ ড্রেজার ভাংচুর করে এবং ড্রেজার মালিক মোঃ সেলিম মিয়াকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে।
জানা গেছে, কচুয়া উপজেলার ৫নং পশ্চিম সহদেবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সেঙ্গুয়া গ্রামের অধিবাসী মৃত: আব্দুল কুদ্দুসের দুই ছেলে মোঃ তাফাজ্জল গাজী ও কালু মিয়া ১৯৯০ সালে সেঙ্গুয়া মৌজায় ৪২ শতাংশ জমি একই উপজেলার বাগমারা গ্রামের মৃত: আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মোঃ আহসান উল্লাহর নিকট বিক্রয় করেন। পরবর্তীতে আহসান উল্লাহ ওই জমি ক্রয়ের পর দীর্ঘ তিন যুগেরও কাছাকাছি শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করে আসছে। কিন্তু ক্রেতা আহসান উল্লাহ দেশের বাহিরে থাকায় ওই সম্পত্তি নিজের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়নি বলে জানতে পেরে দাতা তাফাজ্জল গাজী ও কালু মিয়ার নিকট দারস্ত হয়।
পরবর্তীতে তাফাজ্জল গাজী তার ওয়ারিশদের সাথে কথা বলে ওই সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে খারিজ সহ পুনরায় রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু দাতা পরিবারের ওয়ারিশ আক্তার হোসেন ও আব্দুল মতিনের ছেলে সুমন গাজী এতে বাঁধা দিয়ে জোর পূর্বক ড্রেজার বসিয়ে পার্শবর্তী গ্রাম মালচোয়ার জনৈক ব্যক্তির কাছে বালি বিক্রি করে। এমতাবস্থায় বাদীগন আদালতে মামলা করেন এবং আদালত উক্ত জমির ঊপর স্থিতিঅবস্থা জারি করেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সন্ত্রাসী গং ড্রেজারে মাটি কাটা অব্যাহত রাখে এবং উক্ত জমি ও আশেপাশের ফসলী জমি বিনষ্ট করে। এতে জমির মূল মালিক তাফাজ্জল গাজী ও ক্রয় সূত্রে মালিক আহসান উল্লাহ বাঁধা দিলে তাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং প্রভাব খাটিয়ে চাঁদপুরের বিজ্ঞ আদালতে ওই জমি নিজেরা পাবে দাবী করে উল্টো মামলা দায়ের করে। সুমন গাজীর মামলার প্রেক্ষিতে ৫ জুলাই আদালতে শুনানী ধার্য্য হয় এবং বিষয়টি স্থানীয় ভাবে সমাধানের লক্ষ্যে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আলমগীর হোসেন এর সভাপতিত্বে সেঙ্গুয়া ও বাগমারা গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে শালিস বৈঠক বসে। মামলা চলমান থাকাবস্থায় এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক সেবী আক্তার হোসেন, সুমন গাজী, রুবেল প্রধান, ডালিম গং রা বাদীকে বিভিন্ন সময়ে নানান ভয়ভীতি ও হুমকি দমকী প্রদর্শন করেন এবং ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন গ্রাম আদালতের এখতিয়ার ভুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও দুবার নোটিশ দিয়ে অন্যায় ভাবে সমন জারী করেন। বাদী পরিবারের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন সময় বিষয়টি প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো অপরাধীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সহযোগিতা করছেন বলে ক্ষতিগ্রস্ত অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের বক্তব্য জানতে বারবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া জায়নি।
এদিকে শালিস বৈঠক ও মামলা করার পরও বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় জমির মূল মালিক তাফাজ্জল গাজী স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপির দারস্থ হলে এমপি বিষয়টি কচুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে দেখার নির্দেশনা দিলে বুধবার সরেজমিনে গিয়ে এসিল্যান্ড ওই ড্রেজার ভাংচুর করে দুজনকে আটক করে এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করেন। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব খাটিয়ে সুমন ও আক্তার গংরা ঐ স্থানে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ ইবনে আল জায়েদ হোসেন এর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী।