চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সোমবার। কাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ১৬টি কেন্দ্রে একটানা ভোট গ্রহণ চলবে। এই ১৬টি কেন্দ্রের মধ্যে সবগুলোকেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে দাবি করেছেন একাধিক মেয়র প্রার্থী।
নির্বাচন নিয়ে মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মহিউদ্দিন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট উপহার দেওয়ার জন্য সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য মতে, গতকাল শনিবার রাতে শেষ হয়েছে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ১৬টি কেন্দ্রে ৩৩ হাজার ৩৩৬ জন ভোটার আছেন। এর মধ্যে ১৭ হাজার ২ পুরুষ এবং ১৬ হাজার ৩৩৪ জন নারী ভোটার। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ তোফায়েল হোসেন বলেন, ভোটের পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর। সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া, পুলিশের মোবাইল টিম, গোয়েন্দা, সাদা পোশাকের পুলিশ, র্যাব মোতায়েন থাকবে। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্বে থাকবেন।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, নির্বাচনে কোনো প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। ভোটগ্রহণ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে কঠোর নিদের্শনা দেওয়া আছে। নির্বাচনের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে ও কেন্দ্রের বাইরে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। কেউ যদি কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে গোলযোগ সৃষ্টি বা ভোটে প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টা করে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ছেংগারচর পৌরসভা নির্বাচনের সকল প্রকার প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। নির্বাচনের রাত পোহালেই। ভোট নিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের নানা সমীকরণ।
জয়ের জন্য প্রতিনিয়ত নিজেদের মতো করে কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরিফ উল্যাহ সরকার, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সেলিম হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল হক সরকার, আবদুল ওয়াদুদ মাষ্টার। ভোটারদের মন জয়ে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে নিয়ামক বা ফ্যাক্টর কারা হবেন, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা নাকি দলীয় প্রতীক, নারী নাকি নতুন ভোটার কারা নির্ধারণ করবেন পৌরপিতা- পৌরসভা জুড়ে এমনই আলোচনাই সবার মধ্যে।
পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলছে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের প্রচার-প্রচারণা। মেয়র পদে চার জন প্রার্থী থাকলেও সকলের দৃষ্টি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরিফ উল্যাহ সরকার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল হক সরকারের দিকে। আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের প্রচার প্রচারণা করছেন নৌকার প্রার্থী। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল হক সরকার গোপনে ভোটারদের কাছে গণসংযোগ করছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সেলিম হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ মাষ্টার মাইকিংয়ে প্রচারনা করছেন।
গত কয়েক দিনে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড ঘুরে ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে আরো কিছু ফ্যাক্টর কাজ করবে। দলীয় প্রতীক বা নিজস্ব ভোটারদের সঙ্গে ব্যক্তি ইমেজ তো থাকবেই। প্রধান দুই মেয়র প্রার্থীর যিনি এসব ভোট নিজের বাক্সে নিতে পারবেন, তিনিই হাসবেন বিজয়ের হাসি। আর ভোটারদের প্রত্যাশা-ভয়হীন পরিবেশে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিতে চান তারা। যেখানে ঘটবে তাদের মতের প্রতিফলন। সুখে-দুঃখে পাশে পাবেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরিফ উল্যাহ সরকারের নৌকার পক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আ.লীগের সহ-সভাপতি অ্যাড. নুরুল আমিন রুহুল, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মাইনুল হোসেন খান নিখিল’সহ দলীয় নেতৃবৃন্দ পৌর এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করে ভোট প্রার্থনা করেন।
অপরদিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নুরুল হক সরকার ও আবদুল ওয়াদুদ মাষ্টারকে বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করেছেন।
নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে: আরিফ উল্যাহ সরকার শনিবার প্রচারণার শেষ দিনেও ৫াট পথসভা করেন তিনি। আগামী ১৭ জুলাই নৌকার পক্ষে রায় দিতে পৌবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ছেংগারচর ভোট হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। চ্যালেঞ্জ থাকলেও নৌকার জয়ের ব্যপারে শতভাগ আশা প্রকাশ করে আরিফ উল্যাহ সরকার বলেন, ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থীর প্রতি হয়রানিমূলক আচরণ হচ্ছে না, হবেও না। আরিফ উল্যাহ সরকার বলেন, প্রচারনাকালে আমি পৌরবাসীর ব্যাপক সমর্থন পেয়েছি, যেখানেই গিয়েছি নৌকার পক্ষে গণজোয়ার দেখতে পেয়েছি। ছেংগারচরে ভোট উৎসব হচ্ছে, একটি দল অংশ না নিলেও উৎসবে কোনো ঘাটতি হয়নি।
আমার বাবা দীর্ঘ ৩০ বছর ছেংগারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।
ভোটের প্রচারে খুশি জাতীয় পার্টির সেলিম হোসেন জাতীয় পার্টির হয়ে মেয়র পদে ভোটের জন্য নগর চষে বেড়িয়েছেন মো. সেলিম হোসেন। প্রচারণার শেষদিন ছেংগারচর বাজারসহ এলাকায় গণসংযোগ চালান।
গনসংযোগকালে তিনি বলেন, তিনি ছেংগারচরে জাতীয় পার্টির আমলে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে তিনি জনগনের ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। প্রচারণার শেষ দিন পৌরবাসীর কাছে নিজের দেয়া ইশতেহার বাস্তবায়নের সুযোগ দিতে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চান।
পৌরবাসীকে সকালেই ভোটকেন্দ্রে আসার আহবান নুরুল হক সরকারের ‘যত বাধা আসুক, যতই হুমকি আসুক’ ভোটের দিন সকাল সকাল ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়েছেন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নুরুল হক সরকার। প্রচারনার শেষ দিন সকাল ১১টায় তিনি প্রচারণায় বের হন। ঝিনাইয়া এলাকায় আমার প্রচারণায় নৌকার প্রার্থীর লোকজন আমার কর্মীদের উপর হামলা করে। এতে একজন গুরুত্বর আহত হন। আমি ১৬টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে রিটার্ণিং কর্মর্কতার দপ্তরে আবেদন করেছি।
তিনি ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, ভোটের দিন ভোটারদের হাতে থাকবে সকল ক্ষমতা। তাই ভোটারদের সকল ধরনের অন্যায়ের জবাব ভোটের মাধ্যমে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়াও ভোট যাতে কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে সেজন্য কেন্দ্র পাহারা দেয়ারও আহ্বান জানান নুরুল হক সরকার।
আমার স্ত্রী আমেনা বেগম দুই বার ছেংগারচর পৌরসভার মেয়র ছিলেন।
ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করেছেন আবদুল ওয়াদুদ মাষ্টারের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ মাষ্টার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। তিনি নির্বাচনী মাঠে ব্যাপক প্রচার প্রচারনা করেছেন। তিনি ভোটারদের সাড়াও পেয়েছেন। সাবেক কমিশনার থাকায় এলাকার উন্নয়নও করেছেন। তিনি শিক্ষক হিসেবে তার অনেক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তারাও তার পক্ষে কাজ করছেন বলে তিনি জানান।