ইউক্রেনের বন্দরগুলো থেকে নিরাপদে শস্য রপ্তানির চুক্তি থেকে রাশিয়া বেরিয়ে যাওয়ার পর বিশ্ববাজারে গমের দামে উত্থান-পতন চলছে। মূলত ইউক্রেন থেকে গম রপ্তানি বন্ধ থাকলে বিশ্ববাজারে গমের সরবরাহে বাড়তি চাপ তৈরি হবে, এমন আশঙ্কায় গমের দাম বাড়ছে। তবে রাশিয়া আবার চুক্তিতে ফিরতে পারে, এমন সম্ভাবনায় কখনো এই বাড়তি দাম কিছুটা কমছে। বিশ্ববাজার পর্যবেক্ষণ করে এমন তথ্যই দিয়েছেন আমদানিকারকেরা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের জুলাইয়ে ইউক্রেন থেকে নিরাপদে শস্য রপ্তানির উদ্যোগ নেয় জাতিসংঘ ও তুরস্ক। তাদের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শস্যচুক্তি হয়। তিন দফা বাড়ানোর পর ১৭ জুলাই এই শস্যচুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। রাশিয়ার আপত্তিতে চুক্তির মেয়াদ আর বাড়েনি। চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় বিশ্ববাজারে গমের দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কতটুকু বাড়ছে-কমছে, তার হিসাব পাওয়া যায় পণ্য বেচাকেনা বা লেনদেনের কমোডিটি এক্সচেঞ্জগুলোয়। বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো কমোডিটি এক্সচেঞ্জের একটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘শিকাগো বোর্ড অব ট্রেড-সিবিওটি’র লেনদেনের তথ্যে দেখা যায়, চুক্তির মেয়াদ শেষের আগে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ খোলা ছিল গত শুক্রবার। ওই দিন সাধারণ আমিষযুক্ত নরম গম টনপ্রতি ২৩৫ ডলারে বেচাকেনা হয়েছিল।
তবে চুক্তি নবায়ন না হওয়ার দিন গত সোমবার তা একলাফে টনপ্রতি ১৭ ডলার বেড়ে যায়। দিন শেষে আবার টনপ্রতি ১৩ ডলার কমে যায়। মঙ্গলবারও উত্থান-পতন শেষে কিছুটা বাড়তি ছিল গমের দাম। বুধবার কমোডিটি এক্সচেঞ্জে টনপ্রতি গম ২৫৭ ডলারের কম-বেশি দরে বেচাকেনা হচ্ছিল। অর্থাৎ চুক্তি নবায়ন না হওয়ার প্রভাবে তিন দিনে গমের দাম ৯ শতাংশ বা টনপ্রতি ২০ থেকে ২১ ডলার বেড়েছে।
আমদানিকারকেরা জানিয়েছেন, বিশ্ববাজার থেকে সাধারণ আমিষযুক্ত গম আমদানিতে এখন টনপ্রতি জাহাজভাড়াসহ গুনতে হবে ২৯৫ থেকে ৩০০ ডলার। চুক্তি বলবৎ থাকা অবস্থায় এই দর ছিল টনপ্রতি ২৭০ থেকে ২৭৫ ডলার।
তবে বিশ্ববাজারে গমের দামে অস্থিরতা থাকলেও দেশে গমের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে বলে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। রাশিয়া ও ইউক্রেনের গমের দাম দেশের বাজারে প্রতি মণে ২০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারে গমের দাম বাড়লেও দেশের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। মূলত দেশে এখন গমের সংকট নেই।
ব্যবসায়ীরা জানান, রাশিয়া চুক্তিতে না ফিরলে বিশ্ববাজারে বাড়তি চাপ তৈরি হবে। কারণ, চুক্তির আওতায় ইউক্রেন ৩০টি দেশে গম রপ্তানি করত। ইউক্রেনের গমের তৃতীয় সর্বোচ্চ গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশসহ এসব দেশকে এখন বিকল্প বাজার থেকে গম কিনতে হবে। তাতে বিকল্প বাজারগুলোয় বাড়তি চাপ তৈরি হবে। তবে রাশিয়া চুক্তিতে ফিরলে গমের দাম আবার কমে যেতে পারে।